Logo

জমঈয়ত শুব্বানে আহলে হাদীস বাংলাদেশ

Jamiyat Shubbane Ahl-Al Hadith Bangladesh

এই ওয়েবসাইটটি বর্তমানে উন্নয়নাধীন। সকল তথ্য খুব শীঘ্রই যুক্ত করা হবে ইনশাআল্লাহ!

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ: যৌক্তিকতা ও বাস্তবতা

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ: যৌক্তিকতা ও বাস্তবতা

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ:
যৌক্তিকতা ও বাস্তবতা

ভূমিকা
"ধার্মিকরাই সুখী" একটি চিরাচরিত জীবনমুখী সকল দেশে প্রচলিত বাস্তব প্রবাদ। দেশের বিভিন্ন সময়ের শিক্ষা নীতিতে যেসব উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে তা হল-
'আল্লাহ্ তায়ালা/সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস ও শিশুর মধ্যে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা এবং সকল ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের শ্রদ্ধাশীল হওয়া।' অথচ আমাদের দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে শিক্ষাকে ধর্মহীন শিক্ষা ব্যবস্থা পরিণত করা হয়েছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার প্রথম সোপান। শিক্ষার প্রাথমিক ভিত এ স্তরেই স্থাপিত হয়। সাধারণত দেশ জাতি এবং ধর্মীয় ইত্যাদি বিষয়কে সামনে রেখেই বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম তৈরি করা হয়ে থাকে এবং সে অনুযায়ী বিদ্যালয়ের পাঠক্রম পরিচালিত হয়।
প্রাথমিক শিক্ষার সিলেবাসে দেখা যায় যে তৃতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ইসলাম শিক্ষা রয়েছে। কিন্তু এই স্তরে এই বিষয়টি পড়ানোর জন্য কোন শিক্ষকের পদ নেই। পদ না থাকার কারণে স্বভাবতই কোন স্কুলে এ বিষয়ে শিক্ষক নেই। আশ্চর্যের কথা হল ছাগল দিয়ে লাঙ্গল চাষ করানোর মত সাধারণ শিক্ষকদের দিয়ে এ বিষয়টি পড়ানো হয়। তাও আবার ভিন্ন ধর্মের সাধারণ শিক্ষকদের দিয়ে।
একজন সাধারণ শিক্ষক যখন পড়াশোনা করেছেন তখন তারও ইসলামী শিক্ষার কোন শিক্ষক ছিল না যার কারণে তিনি এ বিষয়টি সম্পর্কে একেবারেই অনবহিত। তাকে দিয়ে ইসলাম শিক্ষার ক্লাস করানো মানে মাঝি বিহীন নৌকা চালানো। সি.এস. লিউস বলেছেন শিক্ষা মানুষকে উন্নত করে কিন্তুনৈতিকতাবিহীন শিক্ষা মানুষকে সুচতুর শয়তানে পরিণত করে।
বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় সাধারণত সে ক্লাসটি সেভাবে হয় না । কারণ শিক্ষার্থীরা সেখানে কোন আনন্দ বা মজা পায় না। এজন্য ক্লাসের প্রতি তারা কখনো মনোযোগী হয় না। যখন অন্য ধর্মের একজন লোক ক্লাস নেন তখন তো ক্লাসের অবস্থা কি সেটা সহজেই বোঝা যায়। শিক্ষককে যখন বিষয়টি পড়াতে দেওয়া হয় তিনি নিজেও আগ্রহী থাকেন না এই বিষয়ে| যার কারণে ক্লাস তিনি সেভাবে করাতে পারেন না বা করেন না বা মনোযোগী হন না অথবা সময় মত ক্লাসে যান না। সরকার এদিকটি নিয়ে কখনো ভাবেনি বা চিন্তাও করে নি। বা চিন্তার সুযোগ ছিল না মনে হয়। এতে পাঠ্যসূচিতে ধর্ম শিক্ষা বিষয়টি থাকলেও ধর্মীয় শিক্ষক না থাকার কারণে বিষয়টির গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। আর শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
আল-কোরআনের ৯৬ নং সূরা আলাকে শিক্ষার মৌলিক ৫টি উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে। ধর্ম-দল-মত নির্বিশেষে সকলকে পড়তে হবে। ধর্ম-দল-মত নির্বিশেষে সকলকে পড়তে হবে স্রষ্টার নামে। উত্তম শিক্ষার জন্য একজন উত্তম শিক্ষকের প্রয়োজন অবধারিত| শিখার জন্য শিক্ষক অত্যাবশ্যকীয়। শিক্ষা দিতে হবে হাতে কলমে উপকরণের মাধ্যমে। শিক্ষা দিতে হবে অজানা বিষয়কে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ করেন।আমার রব আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন এই জন্য আমি উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছি।
তাই দেশ জাতি রাষ্ট্রকে বাঁচাতে দেশের নাগরিককে সুনাগরিক সুশিক্ষিত দেশপ্রেমিক এবং ধর্মীয় সহিষ্ণু হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কোন বিকল্প নেই।

প্রাথমিক বিদ্যালয় সংখ্যা:
২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫,৫৬৬টি। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংখ্যা ৪১৪৯। সর্বমোট ৬৯,৭১৫টি।

প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সংখ্যা:
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা ৩,৮৪,৫১৩ জন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যাটি ২০২৩ সালের এবং এখানে প্রায় ৬৫ শতাংশ নারী শিক্ষক রয়েছেন। শূন্য পদ সংখ্যা ৭৮৩৮০।
প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য:
দেশের বিভিন্ন সময়ে প্রণীত শিক্ষা নীতিতে যেসব উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে তা হল-
1. শিক্ষার্থীর মনে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা'য়ালার প্রতি অটল আস্থা ও বিশ্বাস গড়ে তোলা। যেন এই বিশ্বাস তার চিন্তা ও কর্মে অনুপ্রেরণা
2. আল্লাহ্ তায়ালা/সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস ও শিশুর মধ্যে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা এবং সকল ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
3. সামাজিক ও সুনাগরিক হওয়ার গুণাবলি এবং বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনে সহায়তা করা।
4. ভালো-মন্দের পার্থক্য অনুধাবনের মাধ্যম সঠিক পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করা।
5. অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, পরমতসহিষ্ণুতা, ত্যাগের মনোভাব ও মিলেমিশে বাস করার মানসিকতা সৃষ্টি করা
6. নিজের কাজ নিজে করার মাধ্যমে শ্রমের মর্যাদা উপলদ্ধি ও আত্মমর্যাদা বিকাশে সহায়তা করা।
7. প্রকৃতি, পরিবেশ ও বিশ্বজগৎ সম্পর্কে জানতে ও ভালোবাসতে সহায়তা করা এবং পরিবেশ সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করা ।
8. নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে সচেষ্ট করা।
9. জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ভালোবাসতে সাহায্য করা।
শিক্ষার প্রাথমিক ২ টি উদ্দেশ্যে তিনটি মৌলিক বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে।
1. আল্লাহ সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস বিষয়টি সরাসরি কোরআনের নির্দেশনা।
2. শিশুর মধ্যে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা এবং সকল ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। তথা কোন ধর্মকে তুচ্ছ মনে না করা ছোট করে না দেখা কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ না করা কোন ধর্মাবলম্বীর প্রতি জুলুম অত্যাচার অবিচার না করা।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধর্ম শিক্ষার উদ্দেশ্য:
দেশে বসবাসরত ইসলাম ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, খ্রিষ্ট ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য রচিত ধর্ম শিক্ষা গ্রন্থে যেসব উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে তাতে মৌলিক চারটি বিষয় রয়েছে।
১. স্রষ্টার প্রতি অগাধ বিশ^াস।
২. শিক্ষা আচার সর্বস্ব না হয়ে ধর্মের মর্মবাণীর যথাযথ উপলব্ধি।
৩. শিক্ষার্থীর চরিত্রে মহৎ গুণাবলী অর্জন।
৪. সৎ সাহস ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণ।
নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:
সকল ধর্মেই নৈতিকতার গুরুত্ব রয়েছে। কোন ধর্মই নৈতিকতা বিহীন শিক্ষাকে সমর্থ্য করে না। কারণ নৈতিকতার মৌলিক উৎস ধর্ম। তবে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ এবং দেশজ আবহও গুরুত্বপূর্ণ উৎস। নৈতিকতা শিক্ষার ক্ষেত্রে এ সকল বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে নৈতিক শিক্ষাদান পদ্ধতি নির্ধারণ করা। ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। আজ নৈতিক শিক্ষা যথাযথ ভাবে না থাকার কারণে সমাজে আমরা দেখছি দুর্নীতি, হত্যা, বিশৃঙ্খলা, ধর্ষণসহ নানারকম সমাজিক অনাচার।

ইসলামে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য:
ইসলামের শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্য বিষয়ে কোরআন হাদিসে অনেক দিকনির্দেশনা রয়েছে এই ছোট্ট পরিসরে সে বিষয়ে আলোকপাত করা মোটেই সম্ভব নয় আমি শুধু নিম্নে দুটি আয়াত এবং রাসূল সাঃ থেকে তিনটি হাদিসের অংশ উল্লেখ করছি।
كَمَاۤ أَرۡسَلۡنَا فِیكُمۡ رَسُولا مِّنكُمۡ یَتۡلُوا۟ عَلَیۡكُمۡ ءَایَـٰتِنَا وَیُزَكِّیكُمۡ وَیُعَلِّمُكُمُ ٱلۡكِتَـٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَیُعَلِّمُكُم مَّا لَمۡ تَكُونُوا۟ تَعۡلَمُونَ
যেমন আমি প্রেরণ করেছি তোমাদের থেকেই একজন রাসুল যিনি তোমাদের পাঠ করে শুনাবেন আমার নিদর্শনসমূহ তোমাদের করবে প্রথম শিক্ষা দিবে গ্রন্থ, বিজ্ঞান এবং তোমাদের অজানা বিষয়। (সূরা আল বাকারা :১৫১)
ধর্ম প্রচারকদের পাঁচটি গুণ থাকতে হবে
১. ইসলামের সকল মহাপুরুষ শিক্ষক যে জাতির শিক্ষা কাজে নিয়োজিত থাকবেন।
২. তারা সবাই স্বজাতি থেকেই নির্বাচিত হবেন।
৩. তারা সবাই ধর্মীয় গ্রন্থ শিক্ষা দিবেন।
৪. জীবন পরিচালনার জন্য যুগোপযোগী বিজ্ঞান শিক্ষা দিবেন।
৫. তারা অজানা বিষয় শিক্ষা দিবেন।
ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِی خَلَقَ.....ٱلَّذِی عَلَّمَ بِٱلۡقَلَ
আল-কোরআনের ৯৬ নং সূরা আলাকে শিক্ষার মৌলিক ৮টি উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে।
১. ধর্ম-দল-মত নির্বিশেষে সকলকে পড়তে হবে।
২. ধর্ম-দল-মত নির্বিশেষে সকলকে পড়তে হবে স্রষ্টার নামে।
৩. স্রষ্টার পরিচয় জানতে হবে।
৪. জীবন-জগত সম্পর্কে জানতে হবে।
৫. জ্ঞান বৃদ্ধি করতে হবে।
৬. শিখার জন্য শিক্ষক অত্যাবশ্যকীয়।
৭. শিক্ষা দিতে হবে হাতে কলমে উপকরণের মাধ্যমে।
৮. শিক্ষা দিতে হবে অজানা বিষয়কে।
উত্তম শিক্ষার জন্য একজন উত্তম শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা:
উত্তম শিক্ষার জন্য একজন উত্তম শিক্ষকের প্রয়োজন|মহানবী (সা:)ইরশাদ করেন, أدبني ربي فاحسن تأديبي আমার রব আমাকে শিখিয়েছেন তাই আমি সর্বোত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছি।بعثت معلما আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। بعثت لأتمم مكارم الاخلاق আমি তোমাদের উত্তম চরিত্রে পূর্ণতা দানে আগমন করেছি।
তার মানে একজন শিক্ষক হওয়ার জন্য তাকে উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে একজন শিক্ষক অত্যন্ত চরিত্র এবং নৈতিক নৈতিকতার অধিকারী হতে হবে। মহানবী (সা:) অশক্ষিা, কুশক্ষিা ও র্মূখতার চরম অন্ধকারে আগমন করে তিনি তার উত্তম চরিত্র ও তিকতার দ্বারা দেশ-জাত মুসলিম উম্মাহ তথা সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সামর্থ্য হন।

ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষা বিষয়ক পরিভাষার গুরুত্ব:
ইসলামে শিক্ষা বিষয়ে তারবিয়া (تربيه) তালিম (تعليم) তাদিব (تأديب) তাদরিব (تدريب) তাদরিস (تدريس) এ পাঁচটি মৌলিক পরিভাষা পাওয়া যায়। ইসলামে প্রচলিত এপরিভাষাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ইসলামী শিক্ষার পূর্ণাঙ্গ এবং মৌলিক বিষয়গুলো এতে প্রতিভাহত হয়েছে। অর্থাৎ ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে একজন সুমানুষ সুনাগরিক সুসভ্য জাতি হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে সামর্থ্যবান হয়।

এ পাঁচটি পরিভাষা শিক্ষা বিষয়ে যেসব যথার্থ অর্থ পাওয়া যায় তা হল-
১. প্রবৃদ্ধি দান করা বা বড় করে তোলা।
২. উন্নত করা বা অগ্রসর করানো।
৩. প্রতিষ্ঠিত করা বা গড়ে তোলা।
৪. পূর্ণতা দান করা।
৫. জাগিয়ে তোলা।
৬. সম্মান দেয়া।
৭. উদ্ভাবন করা।
৮. লালন-পালন করা।
৯. শিক্ষিত করে তোলা।
১০. বিনয়ী করে তোলা।
১১. উন্নত প্রণালী শেখানো।
১২. আনুষ্ঠানিক শিক্ষা দান।
১৩. শিক্ষানবিশিতে ভর্তি হওয়া।
১৪. প্রেরণা দেয়া বা উৎসাহ দান।
১৫. সু-সভ্য করা বা পরিচ্ছন্ন করা।
১৬. শিক্ষাদানপূর্বক নিয়মানুগ করানো।
১৭. সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধন।
১৮. পা-িত্য বা বিদ্যা অর্জন করা।
১৯. পরামর্শ দেয়া বা উপদেশ দেয়া।
২০. প্রথা ও রীতিনীতি অভ্যস্ত করানো।
২১. সুসভ্য করে তোলা বা অনাকাক্সিক্ষত আচরণ থেকে বিরত রাখা।
২২. একটু একটু করে জাগিয়ে তোলা বা সম্প্রসারিত করা।
২৩. পথ প্রদর্শন করা বা সঠিক পথের সন্ধান দেয়া।
২৪. ভদ্রতা শেখানো বা ঘষেমেজে সম্মানজনক আচরণ শেখানো।
২৫. সচ্চরিত্র শিক্ষাদান বা উন্নত নৈতিক আচরণ শিক্ষাদান।
২৬. মানসিক, নৈতিক ও শারীরিক পরিগঠন করা।
২৭. কর্মদক্ষ করানো বা কৌশল শেখানো।
২৮. অধ্যয়ন করা বা মনোনিবেশ সহকারে পাঠ শেখা।
২৯. গবেষণা করা বা বিচার বিবেচনা করা

বিভিন্ন জাতীয় শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষা:
জাতীয় শিক্ষানীতি- ২০০০ এ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার বিষয়ে যা উল্লেখ করা হয়েছে- ধর্ম অনৈতিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন আচরণগত উৎকর্ষ সাধন এবং জীবন ও সমাজে নৈতিক মানসকিতা সৃষ্টি ও চরত্রি গঠন। বর্তমানে বিভিন্ন ধর্মালম্বী শিক্ষার্থীর জন্য নিজ নিজ ধর্ম বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। এ সকল ব্যবস্থা সুসংহত ও গতিশীল করে যথাযথ মানসম্পন্ন ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার বাস্তবায়ন মূল লক্ষ্য। প্রত্যেক ধর্মের ধর্মীয় মূল বিষয়সমূহের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় মূল বিষয়ের উপর জোর দেয়া হয়েছে ।(জাতীয় শক্ষিানীতি ২০০০)

জাতীয় শিক্ষানীতি -২০১০ এ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা
ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ধর্ম সম্পর্কে পরিচিতি, আচরণগত উৎকর্ষ সাধন এবং জীবন ও সমাজে নৈতিক মানসিকতা সৃষ্টি ও চরিত্র গঠন।
এই শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিরূপ :
১. প্রচলিত ব্যবস্থাকে গতিশীল করে যথাযথ মানসম্পন্ন ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাদান।
২. প্রত্যেক ধর্মের ধর্মীয় মৌল বিষয়সমূহের সঙ্গে নৈতিকতার উপর জোর দেয়া
৩. ধর্মশিক্ষা যাতে শুধু আনুানিক আচার পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে চরিত্র গঠনের সহায়ক হয় সেদিকে নজর দেয়া। (জাতীয় শিক্ষানীতি- ২০১০)
প্রাথমিক বিদ্যালয় ধর্মীয় শিক্ষক না থাকার বাস্তবতা
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষার বাস্তবতা খুবই করুন। মাঝি ছাড়া যেমন নৌকা চলে না কিন্তু যুগ যুগ ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ধর্মীয় শিক্ষক ছাড়াই ধর্ম নৈতিকতার শিক্ষা পাঠদান চলে আসছে। এর কুফল কি হয়েছে তার বাস্তবতা নিম্নে একটু আলোচনা করা হলো-
দূর্নীতিমুক্ত একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মানে ধর্মীয় শিক্ষার বিকল্প নেই। ধর্ম শিক্ষা মানুষকে বিনয়ী ও নীতিবান করে গড়ে তোলে। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ধর্মীয় শিক্ষা চালু আছে। আছে মাধ্যমিকেও। প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অন্তত পাঁচজন শিক্ষক থাকেন। পাঁচজন শিক্ষকেরই কেউ না কেউ পড়ান ইসলাম শিক্ষা ও অন্যান্য ধর্ম শিক্ষা। বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারদর্শী শিক্ষক তা পড়ান; কিন্তু ধর্ম শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষকরা তা পড়ান।
জীবন-জীবিকায় শিক্ষার পাশাপাশি ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শিশু পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা লাভ করে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষা পড়ানো হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত ধর্ম শিক্ষকের অভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। অনেক স্কুলে ভিন্ন ধর্মের শিক্ষকরা পড়াচ্ছেন ইসলাম ধর্ম শিক্ষা। কারণ ওই সব স্কুলে কোনও মুসলিম শিক্ষক নেই।
অন্যদিকে একই কারণ ও পরিস্থিতিতে মুসলিম শিক্ষকরা পড়াচ্ছেন হিন্দু ধর্ম শিক্ষা। কিছু স্কুলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষকের অভাবে ধর্ম শিক্ষার ক্লাসও নিয়মিত হয় না। দায়সারা গোছের পাঠদানের ফলে কোমলমতি শিশুরা ধর্মের মর্ম উপলব্ধি ও নৈতিকতার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষা গ্রহণের সঙ্গে পবিত্র কোরআন মাজিদ শিক্ষা জড়িত আছে। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনও ধর্মীয় শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের আরবি পড়া ও লেখা ভালোভাবে শেখানো সম্ভব হয় না।
এমনকি বেশির ভাগ শিক্ষক, যারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্ম শিক্ষা বই পড়ান, তারা নিজেরাই আরবি পড়তে বা লিখতে পারেন না। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আরবি পড়া ও লেখা ভালোভাবে শেখানো সম্ভব হয় না। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পবিত্র কোরআন মাজিদ ভালোভাবে পড়তে পারে না।
আমাদের দেশের সব মুসলমান মা-বাবারই ইচ্ছা থাকে তার সন্তান পবিত্র কোরআন তিলওয়াত শিখবে ও পড়বে। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পবিত্র কোরআন শিক্ষার ভালো শিক্ষক না থাকায় তারা তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে মক্তব-মাদ্রাসায় পাঠান। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি আশঙ্কাজনকভাবে কমছে।
২০২১ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৬৫,৮৮২টি। গত তিন বছরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা কমেছে৩১৬ টি।
২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি পেয়ে ১৬.২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত এক বছরের ব্যবধানে ১৩.১৫% বেড়েছে। এই ক্রমবর্ধমান হার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি বড় ধাক্কা।
৫০ জনের কম শিক্ষার্থী রয়েছে এমন ৩০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করার তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে।

ধর্ম শিক্ষার প্রতি অবজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ:
চলতি বছরের ২৯ জুলাইয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় ‘প্রাথমিক নিয়োগ পাবেন সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষক’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৫৮৩ টি ক্লাস্টারে একজন করে সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। তারা ওই ক্লাস্টারের প্রতিটি বিদ্যালয়ে এই দু’টি বিষয়ে শিক্ষা দিবেন।
এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সারা দেশের ৯০% মুসলিম ক্ষোভে ফেটে পড়েছে । সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের দৈনন্দিন জীবনে দেশে.০০০১% লোকের কোন কাজে আসবে না সেই সংগীত বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে অথচ দৈনন্দিন জীবনে সব সময় কাজে লাগবে যে ধর্ম সে ধর্ম বিষয়ের কোনো শিক্ষক নেই ।
প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ব্যাহত হওয়া:
লক্ষের মধ্যে কোথাও স্রষ্টা/ধর্মকে জানা এবং সে অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তোলার বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনা নেই। যদিও উদ্দেশ্যের দু জায়গায় স্রষ্টার প্রতি অটল আস্থার কথা বলা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়া
১. মনে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা'য়ালার প্রতি অটল আস্থা ও বিশ্বাস গড়ে তোলা। যেন এই বিশ্বাস তার চিন্তা ও কর্মে অনুপ্রেরণা
২. আল্লাহ্ তায়ালা/সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস ও শিশুর মধ্যে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা এবং সকল ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের শ্রদ্ধাশীল হওয়া।

সরকারের প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য ব্যাহত:
সরকারের উদ্দেশ্য হলো দেশের ১০০% লোককে স্বাক্ষরিত করা। শুধু ধর্ম শিক্ষার প্রতি সরকারের বিরূপ মনোভাবের কারণে অনেক ইসলামী পরিবার তাদের সন্তানদেরকে স্কুল আর পাঠাচ্ছে না।
বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস:
ধর্মীয় মূল্যবোধ এর উপরে প্রতিষ্ঠিত পরিবারের শিশুদেরকে আর প্রাথমিক বিদ্যালয় ধর্মহীন শিক্ষার জন্য পাঠাচ্ছে না এতে আসতে আসতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
নৈতিকতা বিহীন শিক্ষার প্রসার:
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষা যথাযথ না হওয়ায় সন্তানগন নৈতিকতা বিহীন শিক্ষার প্রতি ঝুঁকে যাচ্ছে।
সুনাগরিক গড়ে ওঠার পথে বাঁধা:
নীতি নৈতিকতা ছাড়া কোনদিন শিক্ষার্থীরা সুযোগ্য দক্ষ সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠছে না।
ধর্মহীন শিক্ষা একটি অপূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ব্যবস্থা:
ধর্মহীন শিক্ষা আসলে একটি অপূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ব্যবস্থা। তাই দেশের ৯০% মুসলিম হওয়ায় তারা ধর্মহীন শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
সমাজে কুপ্রভাব বিস্তার:
ধর্ম মানুষকে সুসভ্য করে। কিন্তু ধর্মহীন শিক্ষা শিক্ষিতরা ধর্মীয় মূল্যবোধ না থাকার কারণে সমাজে বিশেষ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। সমাজে কুপ্রভাব পড়ে।

আধুনিকতার নামে ধর্মহীন শিক্ষার প্রসার:
‘আধুনিকতা’র নামে ধর্মীয় শিক্ষা না দেয়ায় তরুণ-তরুণীরা যখন বড় হতে থাকে, তখনই তারা ধর্মীয় জ্ঞানের শূন্যতা অনুভব করে। ধর্মীয় বিষয়গুলো জানতে দ্বারস্থ হয় ইন্টানেটের। অন্যদিকে ইন্টারনেটের বিশাল এ উন্মুক্ত মাধ্যমে ফাঁদ পেতে রাখে বিপথগামী জঙ্গিরা। বিপুল সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্ম ইসলামের ‘জ্ঞানার্জন’ করতে গিয়ে জঙ্গিদের ফাঁদে পা দেয়। শিক্ষার্থীদের ইসলামের মৌলিক জ্ঞানের এ শূন্যতাকে কাজে লাগিয়ে জঙ্গিরা কৌশলে তাদের মগজধোলাই করে তাদের বিপথে ঠেলে দেয়। এর বিষাক্ত ছোবলে আক্রান্ত হয়ে তারা হারিয়ে যায় জঙ্গিবাদের অতল গহ্বরে। যদি শিক্ষার্থীদের ধর্মের মৌলিক জ্ঞান থাকত তাহলে তাদের স্ব স্ব ধর্মীয় জ্ঞানের রাডারে এটা ধরা পড়ত যে, জঙ্গিরা ধর্মের নামে তাদের ভুল বোঝাচ্ছে। তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারত জঙ্গিদের বিষাক্ত ছোবল থেকে। আগামী প্রজন্মকে জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত রাখতেও ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের সৌন্দর্য তুলে ধরে শিশুদের মনে জঙ্গিবাদের প্রতি ঘৃণা তৈরি করে দিয়ে প্রকৃত ধর্মের শিক্ষা দিতে হবে।
তাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী ধরে রাখার স্বার্থে এবং দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের একই সঙ্গে জীবন-জীবিকার শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দেওয়া একান্ত আবশ্যক। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিন দিন শিক্ষার্থী সংখ্যা যেভাবে হ্রাস পাচ্ছ অদূর ভবিষ্যতে দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসবে।

ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার ফলাফল:
১. মানুষকে তার স্রষ্টা আল্লাহর সাথে পরিচিত করে।
২. মানুষকে আল্লাহর প্রতিনিধির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে বা থাকতে সহায়তা করে।
৩. মানুষকে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে অকুতোভয় করে তোলে।
৪. আল্লাহর বিশাল সৃষ্টি প্রাকৃতিক শক্তির গূঢ় রহস্য উদ্ভাবন ও কলাকৌশল আবিষ্কার করে মানবতার কল্যাণ সাধন করে।
৫. হক্কুল্লাহ এবং হক্কুল ইবাদ বা স্রষ্টাও সৃষ্টির প্রতি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে।
৬. মানুষের দেহ ও মনের চাহিদা যথার্থভাবে পূরণ করে।
৭. মানুষের মাঝে পারস্পরিক মমত্ববোধ ও ভালোবাসা সৃষ্টি করে।
৮. জাগতিক শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষার সমন্বয়ে ভারসাম্যপূর্ণ জীবন গড়তে সহায়তা করে।
৯. নৈতিক শিক্ষা সমাজে আলোকিত মানুষ তৈরীতে ভূমিকা পালন করে-
১০. মানুষের ইহকালীন শান্তি [অর্থাৎ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ইত্যাদি সকল ধরনের সমস্যার সমাধান দেয়] ও পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত করে।
১১. সৎ, চরিত্রবান ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে।
১২. র্দূনীতমিুক্ত একটি সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবে।
১৩. মাদ্রাসা তথা ধর্মী শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে।
১৪. সুশৃংখল সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
১৫. সমাজে শান্তি বিরাজ করবে।
১৬. সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা বৃদ্ধি পাবে।
১৭. সমাজে ও দেশে সৎ লোকের শাসন কায়েম হবে।
১৮. প্রত্যকেই সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।
১৯. চরিত্রবান নাগরিকরা সরকার গঠণ করবে।
২০. দেশে সুদ- ঘোষ বন্ধ হবে।
২১. অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের পথ রোধ হবে।
২২. দেশের টাকা বিদেশে পাচার হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
২৩. সমাজে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
২৪. যুবকদের অলসতা বিদূরীত হবে ফলে তারা কর্মের প্রতি উৎসাহিত হবে।
২৫. ধর্ম শিক্ষা মানুষকে নৈতিক বলে বলিয়ান তথা অশুর শক্তিতে শক্তিশালী হয়ে উঠে। একজন সবল মুমিন একজন দুর্বূল মুমিন হতে উত্তম।
২৭. ৯টি বোর্ডের একটি বোর্ড থেকে পাশ করারা চাকুরী থেকে বঞ্চিত এবং বৈষম্যর শিকার হবে না।
২৮. মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিতদের আর্থ-সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।
২৯. সমাজে অনেক বৈষম্য বিদূরীত হবে।
সুপারিশমালা
আজকের সেমিনারে আমরা সরকারের কাছে যে বিষয়গুলো সুপারিশ করতে চাই তা হল-
১. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের ইসলামী শিক্ষা নিশ্চিত করে শিশু অধিকার নিশ্চিত করণ।
২. অতি শীঘ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা।
৩.অতি শীঘ্র ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা দানের জন্য ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগদান করণ।
৪. ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় শিক্ষক পদে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে কামিল ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি, ইসলামিক স্টাডি এবং কওমি মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রিধারীদের ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দান।
৫. জীবন-জীবিকায় শিক্ষার পাশাপাশি ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শিশুর পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা লাভের পথ সুগম করা।
৬. প্রতিটি বিদ্যালয় একটি করে মসজিদ নির্মাণ করা।
৭. মুসলিম শিশুদের প্রাকটিসে মুসলিম হিসেবে করতে প্রেম আপ করতে মসজিদের যোহর ও আসর সালাত বাধ্যতামূলক করা
৮. যোহর সালাতের পর অন্তত ৫ মিনিট শরীয়তের অন্যান্য বিষয়ে যে যা ক্লাসে পড়ানো সম্ভব নয় তার শিক্ষা দেওয়া।
৯. বাস্তব জীবনের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের বিষয়গুলো হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
১০. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নূরানী শিক্ষা পদ্ধতি চালু করা।
১১. প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের দু'বছর মসজিদ সংলগ্ন মক্তবে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা।
১২. ইসলামিক ফাউন্ডেশনে গণ শিক্ষার অধীনে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা।
১২. ভালো শিক্ষিত ইমাম মুয়াজ্জিনকে দায়িত্ব প্রদান করা / ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দানের ব্যবস্থা করা।
১৩. বিভিন্ন ধর্মের জন্য মন্দির গির্জা এবং টোলে তাদের জন্য এ ধরনের ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থা করা।
১৪. প্রতিটি জেলা উপজেলায় একজন করে মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত পরিদর্শক নিয়োগ দেওয়া।
১৫. প্রাথমিক শিক্ষার মনিটরিং করতে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মনিটরিং সেল স্থাপন করা।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ। ৯০% ভাগ মুসলিমের করের টাকায় পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষার সুব্যবস্থা থাকবে না এটা হতে পারে না। তাই অতিসত্বর প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

প্রবন্ধকার:
প্রফেসর ড. আ.ব.ম. সাইফুল ইসলাম সিদ্দীকী
আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া

স্থান:
জহুর হোসেন চৌধুরী হল জাতীয় প্রেসক্লাব ঢাকা

তারিখ:
23 সেপ্টেম্বর ২০২৫