শুব্বান নামটা শুনলে সুদূর অতীতের কত যে উদ্দীপনাময় ইতিহাসের কথা হৃদয়ে উদীপ্ত হয়ে উঠে তা যেন জীবন সন্ধ্যায় সোনালী প্রভাতের সওগাত ভীড় জমায়। হক ও বাতিলের পরীক্ষার প্রথম রণাঙ্গন বদর প্রান্তর। যুদ্ধের ব্যূহ রচনা করছেন সেনাপতি স্বয়ং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। ‘আবদুর রহমান বিন ‘আওফ (রা.)-এর উভয় পাশে দুই তরুণ মা'আয ও মু‘আয। ‘আবদুর রহমান (রা.)-এর মনটা একটু বিষণ্ণ। কেননা সামনে কাফির প্রতিপক্ষ সাহসী-সুদক্ষ যোদ্ধাবৃন্দের উন্মুক্ত তরবারি চকচক করছে। জীবন-মৃত্যু সংগ্রামে তাঁর ডানে-বামে যদি দক্ষ যুবক-যোদ্ধা থাকতেন তাহলে বলটা শাণিত হত। প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হলো। কাফিরদের রণব্যূহ ভেদ করে অসংখ্য কাফিরকে জাহান্নামে প্রেরণ করে সত্যের জয় যেন হাতের মুঠিতে। তরুণদ্বয় রণউন্মাদনায় অস্থিরভাবে ‘আবদুর রহমান (রা.)-কে জিজ্ঞেস করছে, চাচাজী আবু জাহেলটা কোথায়? আমাদেরকে দেখিয়ে দিন তো। ‘আবদুর রহমান বললেন: তাকে দিয়ে তোমরা কি করবে? সে তো সেনাপতি। ঐ দেখো কেমন রণসাজে তরবারি বর্শা শিরোস্ত্রাণ নিয়ে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছে। কথা শুনামাত্রই বাজপাখীর মতো মুহূর্তের মধ্যে কাফিরদের বেষ্টনী ভেদ করে আবু জাহেলকে এমনভাবে আক্রমণ করল যে,সে আত্মরক্ষার আগেই ধরাশায়ী। মৃত্যু জেনে ফিরে এলো মর্দেমু‘মিন মুজাহিদে শাবাব ঐ মু‘আয ও মা‘আয (রা.)। পরে ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) আবু জাহেলের মস্তক দেহচ্যুত করে ইসলামের কঠোর দুশমনকে নিহত করলেন। তারুণ্যের কি তেজ। যৌবনের কি জযবা। ইসলামের জন্য দীনকে বিজয়ী করার মানসে সে-কি জানবাজ জীবন কুরবানীর দৃঢ় প্রত্যয়।
উহুদের যুদ্ধে যাবার কি প্রবল ইচ্ছা-শুব্বানদের। এ ইচ্ছা তো উৎসবে বা মেলায় যাবার জন্য নয়। এ ইচ্ছা তরবারির নীচে জীবনকে রেখে শত্রুর মুকাবিলা করে দীনকে দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠা করার। বুকের তপ্ততাজা রক্ত ঢেলে দিবার। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ-এর বাণীকে উর্ধ্বে তুলে আসমানী সওগাত ফুরকানুল হামিদকে সবার উপরে প্রতিষ্ঠিত করার- আর কিছু নয়। এ পবিত্র বাণীকে জীবনের জয়গান গ্রহণ করে যুগ-যুগান্তরে দেশ-দেশান্তরে ছড়িয়ে দেয়া। নেই পার্থিব লাভ-লোকসানের হিসেব। হিসেব কেবল মুহিব্বে রাসূল আর আল্লাহপ্রেম। ঐ যে হাতছানি দিয়ে ডাকে জান্নাত।
তরুণ নব্য যুবকের এক সারি সেনাপতি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ -এর সামনে দণ্ডায়মান। যুদ্ধে যেতে চাই। একটাই দাবি। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার, ‘উসমান বিন যাইদ, যাইদ বিন সাবিত, ‘উসাইদ বিন হুযাইর, বারা বিন ‘আযিব, যাইদ বিন আরকাম, আরাবা বিন আউস, ‘আমর বিন হাযম, সামুরাহ বিন জুনদুব, রাফি‘ বিন খাদিজ। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বয়সে শেষের দুজন কেবলমাত্র টিকে থাকল। তাদের বয়স ১৫ বছর।
এতো গেল মহানবীর সংস্পর্শে ইসলামের বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠার দিনের কথা। মহানাবী ঈন্দ্র সিরিয়া অভিযানে নেতৃত্বের ঝাণ্ডা তুলে দিচ্ছেন শাবাব উসামা বিন যাইদ বিন হারিসার হাতে। যৌবনের শক্তি অপরিমিত, যৌবনের 'ইবাদাত দুর্লভ মূল্যবান, যৌবনের সেবা অফুরন্ত, যৌবনে দেশ ও জাতি গড়ার তেজ অক্ষয়, যৌবনের সাহস অকুতভয়। অথচ সেই শুব্বান শক্তি আজ ছিনিয়ে নিলো অপশক্তি, অকেজো করল অপসংস্কৃতি, খণ্ড বিখণ্ড করল তাগুত ও নিফাকের মদদগাররা। কিনে নিলো পেট্রোডিলার। মেধা-প্রতিভা পাচার হলো স্রোতের মতো ভিন দেশী আদর্শের আকর্ষণে কড়ির বিনিময়ে। আজ ইসলামকে, যুব শক্তিকে পঙ্গু করার জন্য, যুবজাগরণকে রুখে দিবার জন্য ইসলাম বিরোধী শিবির অহর্নিশি অতি সুকৌশলে তৎপর।ইসলাম যে বিজয়ী শক্তি আর এ অমিত শক্তির উৎস যুব সমাজ যা মহান স্রষ্টার নি'আমত- এ কথা প্রতিপক্ষ খুব ভালই জানে। আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস থেকে আমাদেরকে অনেক দূরে রাখা হয়েছে আমাদেরকে দিয়েই। অথচ তারা সে ইতিহাস ভুলেনি তো বটে, বরং বারংবার পড়ে আর পড়ে। অক্সফোর্ড, কেমব্রীজ, লন্ডন, প্যারিস, বন, আর মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্রন্থাগারে মুসলিম ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্বর্ণময় লেখাগুলো সযত্নে রক্ষণাবেক্ষণ এবং অধ্যয়ন করা হয়। তারা জানে কীভাবে কিসরা, কাইজারের হাজার বছরের সম্রাজ্য, রোম, কনস্টান্টিনোপল রাজশক্তি মুসলিমদের করতলগত হয়। কীভাবে আইনুত তামার যুদ্ধে বন্দী হয়ে সিরিন ও নুসাইর খলীফা ‘উমার (রা.)-এর রাজধানী মদীনা মুনাওয়ারায় এসে মুক্ত পরিবেশে তাদেরই সন্তান মুহাম্মাদ হাদীস বিশেষজ্ঞ হয়ে স্বপ্নের তাবীরে পারদর্শী হলো আর হেরে গেলো গ্রীক রোমান ও পারসিক জ্যোতির্বিদরা। কীভাবে নুসাইর পুত্র মূসা আর যুবক সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদ বারবার স্পেন পর্তুগাল বিজয় করে ফ্রান্স বিজয়ের দোরগোড়ায় উপনীত হলো। কীভাবে সেই যুবশক্তি আঁধার ইউরোপের জ্ঞানের বাতি জ্বালিয়ে ইউরোপে রেনেসাঁর সূত্রপাত ঘটাল- কর্ডোবা, গ্রানাডা, সেভিল, এছিজা, জায়েন এলাভরা তলেদোর বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানপিপাসু বিজ্ঞানীরা। তারা জানে কীভাবে কর্দমাক্ত লন্ডনের পথে গ্যাসের বাতি জ্বালিয়ে মুসলিমরা রাজপথ বানালো, শিল্প-বিপ্লব ঘটাল। প্রমাণ করল মুসলিমরাই শ্রেষ্ঠ। তারা আরো জানে, কেমনভাবে মুসলিম শক্তিকে ভ্রাতৃদ্বন্দ্বে জড়িয়ে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে স্পেন থেকে বিতাড়িত করল সাড়ে সাতশত বছর রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে, সেই ১৪৯২ সালে। যে সালে মুসলিম নাবিক ও নৌ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কলম্বাস স্পেনের পর্তুগাল থেকে আমেরিকা আবিষ্কারের পথে অগ্রসর হলো। আবিষ্কারের কৃতিত্বটা মুসলিমদের কিন্তু রাজ্যহারা, তাই সেটা কলম্বাস ছিনতাই করে নিলো। আর মুসলিমদের বোকা বানিয়ে এপ্রিলফুল করার জঘন্য নোংরামিতে মাতিয়ে তুলল হতভাগ্য এদেশীয় যুবক পড়ুয়াদের, যারা জানেনা সে করুণ কাহিনী।
তারা জানে যুবক মুহাম্মাদ বিন কাসিম কীভাবে ভারতবর্ষে আর্য অনার্য পুতুল পূজারীদেরকে পরাজিত করে শান্তির ধর্ম ইসলামকে নিয়ে এলো। ব্রাহ্মণ্যবাদের যাঁতাকলে পীড়িত, বর্ণবাদের ঘৃণ্য শিকার, সমাজের শ্রেণী বৈষম্যকে ভেঙে চুরমার করে সকল মুসলিম এক কাতারে সামিল হলো। নেই বর্ণ গোত্র বংশ অর্থবিত্তের শ্রেণী বৈষম্য। সকলেই স্রষ্টার সৃষ্টি। সেই সম্মানিত, উচ্চ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত, যে তাওয়ায় সেরা ও প্রভুভক্তিতে অটল। একদিকে ইউরোপীয় সমাজ জেগে উঠল অন্যদিকে ভারতীয় সমাজও বিপ্লবের নতুন দিশা পেল। মধ্য এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সর্বত্রই ইসলামের সাম্যমৈত্রীর জয়গান। নেই পুতুল পূজা, প্রতীক পূজা, মূর্তির পূজা, মৃতের পূজা- সর্বত্রই এক আল্লাহর ‘ইবাদাত। নেই কোন ফোপরদালালের অংশীবাদ। সেই ৬ষ্ঠ শতক থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত তৎকালীন পরিচিত বিশ্বে মুসলিম যুবশক্তি অজেয়। কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, চিকিৎসা, স্থাপত্য, শিল্পকলা সকল ক্ষেত্রেই ইসলাম যে সভ্যতার লালন-পালন করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল তা-কি অত সহজে খৃস্ট ও পৌত্তলিক জগত হজম করতে পারে?
মুহাম্মাদ ঘোরী যে পৃথ্বিরাজকে পরাজিত করল, সুলতান মাহমুদ যে ভারত ভাগ্য-দেবতা সোমনাথকে তছনছ করে প্রমাণ করল সবই চালাকি আর ভণ্ডামী করে জনগণের অর্থ লুঠ করার অপকৌশল। তবুও অন্ধ বিশ্বাস। এ তো ছাড়া যায় না। এরা জোট বেধে মুসলিম যুবকদেরকে কীভাবে বিপদগামী করে প্রজন্মকে নষ্ট ভ্রষ্ট করা যায় সেই কুটকৌশলে ব্যস্ত। ওরা এখন ইউনিপলার বিশ্ব, মুক্তবাজার অর্থনীতি এমনভাবে মুসলিম বিশ্বকে বন্দী করে চলেছে।
আজ আমরা এক চরম দুর্দিনে। কে ধরবে হাল? আজ তৈলসমৃদ্ধ, মানব-সম্পদ সমৃদ্ধ, খনিজ-সম্পদ, সাগর-সম্পদ যে মুসলিম জনপদে। যে কোনভাবেই হোক তা হস্তগত করতে হবে। তাদের মাঝে ভ্রাতৃদ্বন্দ্ব এবং ওয়ানটাইম ইউজ যন্ত্র টিভি, ল্যাপটপ, মোবাইল- এসব দিয়ে যুবসমাজকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
আজ মুসলিম বয়োজ্যেষ্ঠ ও যুবক তরুণ সবাইকে ইতিহাস জানতে হবে- সেই বদরের রণক্ষেত্র, উহুদের রক্তাক্ত প্রান্তর, পবিত্র কা’বার তাওয়াফ, আরাফাতের সম্মেলন আর রুনাজারি- যুদ্ধ ও শান্তিতে মুসলিম কখনও স্রষ্টার সান্নিধ্য ছাড়েনি, তাই তারা ছিল বিজয়ী। আজ আমরা স্রষ্টার সাথে ভণ্ডামী করছি-অথচ নিজে যে ভণ্ড হয়ে সাধু সেজেছি তা ক’জন উপলব্ধি করছি। বদর রণক্ষেত্রে বিশ্বনবীর সে-কি সাশ্রু নয়নে মুনাজাত প্রভুর সাহায্য কামনায়। তা-কি মনে পড়ে?
বিশ্বনাবী (সঃ) যুবক ‘আবদুল্লাহ বিন ‘উমার (রা.)-কে বললেন- হে ‘আবদুল্লাহ! তুমি যদি রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়তে তবে কতই না ভাল হত। তারপর ইবনু ‘উমার আর কখনো তাহাজ্জুদ বাদ দেননি। গভীর রাতে প্রভুর নিকট অশ্রু ঝরিয়ে যে অমূল্য সম্পদ তিনি লাভ করেছিলেন তা কি বেনযীর নয়? আজ ক’জন যুবক তাহাজ্জুদগুজার? ক’জন শুব্বান এ রাতের রুনাজারীতে স্রষ্টার মদদকামী। ইসলাম আজ অপরিচিত! মুসলিমকে দেখে ইসলাম চেনা যায় না। সেদিন মুসলিমকে দেখে অমুসলিমরা ইসলাম গ্রহণ করেছিল- আর আজ?
একদা পরাজিত শক্তিরা আজ যে আমাদের সকল দিক দিয়ে পরাজয়ের শিকল হাতে, পায়ে, গলায় পরিয়ে ঘুরাচ্ছে তা-কি বুঝবার সময় এখনো আসেনি? ইয়াজুজ মাজুজ আর দাজ্জালের আবির্ভাবের অপেক্ষায় আছ বুঝি? আছারে সুজুদ ও কল্বে মরিচার চিহ্ন তো একত্রে থাকতে পারে না। ‘আছারে সুজুদ’ আর ‘কাল্লা বাল রানা আ’লা কুলুবিহিম মা কানু ইয়াকছিবুন’ যখন প্রথমটি দ্বিতীয়টিকে মিটিয়ে দিবে তখনই কল্বে সলিম পয়দা হয়ে ইব্রাহীমী তাওহীদী চেতনা আর মুহাম্মাদী তাকওয়া প্রভুর রহমাতের সরোবরে শুব্বানের জন্য অবগাহন সম্ভব হবে।
আজ নেতৃত্বের সংকট, কিন্তু কর্তৃত্বের প্রবল আকাঙ্ক্ষা আর দাপট। আজ নেতৃত্বে গুণাবলী অর্জন অপেক্ষা আরোপিত নামাবলী গায়ে ছড়িয়ে পদ অর্থ প্রভাব আর নাম-মর্যাদার আকর্ষণ ও দাবী সর্বাগ্রে নইলে আমি সংগঠনে নেই। সেই কবে শুব্বানের জন্ম, যে কীর্তিমান বয়োশ্রেষ্ঠ জ্ঞানবৃদ্ধ পুরুষের বিপুল উৎসাহ ও আশায় এমনি সৌদি মেহমানদের উপস্থিতিতে। তার ধারাবাহিকতা রক্ষা হলো না কেন? গঠনতন্ত্র, কর্মপদ্ধতি, সদস্য ফরম সবকিছুই করা হলো ক্যাডারভিত্তিক সদস্য-কর্মী-নেতা তৈরীর জন্য তার সফলতার কটি ধাপ অতিক্রম সম্ভব হলো। এমন এক বুজুয়া মনোভাব প্রভাব বিস্তার করল যে, নিজের বাড়ীতেই প্রবেশ নিষিদ্ধ। ইয়ারমুক যুদ্ধ চলছে। সেনাপতি জায়াকে ঐ অপরাধী বিনীতভাবে করুণ প্রার্থনা জানাচ্ছে, আমাকে শৃংখলমুক্ত করে দিন, যুদ্ধ শেষে আবারও আমি ফিরে আসব এ বন্দী শিকলে। কাফিরদের সাথে যুদ্ধ চলছে আর আমি মুসলিম যোদ্ধা এক মুহূর্ত এমনভাবে বন্দী থাকতে পারছি না। তাকে মুক্ত করে দেয়া হলো। তরবারি নিয়ে সে-কি অমিত তেজ আর বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে শত্রু সৈন্য নিধন করে যুদ্ধের গতি মুসলিম অনুকূলে আসলো।
ভুল, অন্যায়, অপরাধ হবে, তার সুরাহা হবে। তাই বলে গোটা সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হবে? এ যে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। নেতৃত্বের গুণাবলীতে এ ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম নেই। থাকতে পারে না।
এদেশে তাওহীদ আর সুন্নাহ প্রতিষ্ঠা এবং শিরক ও বিদ’আত বিতাড়ন যেমন হারে চলছে এমনটি চললে হাজার বছরেও কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না। ফিডার সংগঠন ও তার সংযোগ সবটাকে হিংসা, ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা, আমিই বড়, ভয়-ভীতি বর্জন করে সার্বক্ষণিকভাবে আত্মনিবেদন না করা পর্যন্ত ঈদিত ফল পাওয়া যাবে না। গঠনতন্ত্রকে লঙ্ঘন করে যদি প্রভাবশালী ভিন্ন মত ও আদর্শের ক্ষমতার বলয়ে আত্মসমর্পণ করা হয় তবে আশার প্রদীপের আলোতে পথ চলা দুরূহ হবে।
বড় লোকদের কথামত আদর্শ বিসর্জন দিয়ে নীতি ঢেকে রেখে চলার নীতি গ্রহণ করলে আজকের যে জমকালো আয়োজন তা ধরে রাখা সম্ভব কি-না ভবিষ্যতই বলে দিবে।
পদে থাকলে সংগঠনের কাজে আন্তরিক, তাবলীগ, তানযীম, তাহরীক আর যদি পদে নেই তো কোথাও নেই। কোন একটা ত্রুটির জন্য একজনের অন্যান্য মূল্যবান গুণাবলীরও কদর নেই। এ দেশে বেনযীর তাওহীদ ও সুন্নাহর আন্দোলন যারা করে আজ তাদের ত্যাগ ও কুরবানী আমরা ভুলতে বসেছি। একটা স্রোতস্বিনী যদি পলি ভরাট হয়ে যায় তবে ড্রেজিং ব্যতীত বিকল্প কিছু থাকে না। আর ড্রেজার ড্রাইভার যদি সার্বক্ষণিক স্টিয়ারিং-এ না থাকে তবে নাব্যতা আসবে কী? একজন ব্যক্তির উন্নতি, শ্রীবৃদ্ধি, পরহেজগারী, বিত্তবৈভবে উচ্চাসনে অধিষ্ঠান। আর একটা সংগঠনের উন্নতি-প্রগতি বিস্তার-প্রসার কয়েকজন বিত্তবানের মুক্তহস্তের অবদান কি সমাজ ও জাতির চেহারাকে বদলে দিতে পারে না? কিন্তু ঐ একক ব্যক্তির দ্বারা তা সম্ভব না। সংগঠন, প্রতিষ্ঠান দলের অপরিহার্যতার কথা কালামুল্লাহ শরীফে তাকিদ সহকারে উচ্চারিত। সে ফরযিয়াত আমরা ভণ্ডুল করছি অহংবোধ ও আত্মগরিমায়- যা হারাম।
পরিশেষে মহান মা‘বুদের নিকট আকুল প্রার্থনা, ব্যাকুল আকুতি- আর দশটি অনুষ্ঠানের মতো যেন এটিও না হয়। আয়োজন মহা ধুমধামে জাঁকজমক সহকারে বিশিষ্টবর্গের জ্ঞানগর্ভ ভাষণ আর গুণীজনের কমিটি হয়। তারপর? তার আর পর নেই। লাভ যে মোটেই হলো না-তা নয়। জেলা থেকে অনেকদিনের অদেখা মুখ একত্রিত হয়ে চেনা হলো। বুকভরা আশা আর অতীতের বুকখালি করা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে আসা মনের কোনে ঝাপসা আলো-আধারে ক্ষীণ আশার আলো যদি উঁকি দেয়- হে শুব্বান জেগে উঠো- হে শুব্বান পিতারা। ওদেরকে জাগতে দিন, বেলা শেষে নিবেদন এটুকু। একটি অতীত ঘটনার কথা বলে শেষ করছি। ১৯৮১ সাল। আমি তখন মেহেরপুর সরকারী কলেজে সহকারী অধ্যাপক। মাওলানা আসাদুল্লাহ আল-গালিব আসলেন। দু’জনে মিলে হাড়াভাঙ্গা মাদরাসা হতে একটা প্রোগ্রামে যেতে হবে। মেহেরপুর থেকে বামুন্দী। তারপর ৪/৫ মাইল হবে হাড়াভাঙ্গা। বর্ষাকাল হাঁটু পর্যন্ত কাদা। মাঝে মধ্যে পিচ্ছিল জমির আইল। অবশেষে কষ্টেশিষ্টে দুপুর গড়িয়ে গেল অনুষ্ঠানস্থলে পৌছাতে।তারপর টানা প্রোগ্রাম। প্রশিক্ষণ চলল দুপুর-রাত পর্যন্ত -আগত যুবকদের সাথে ব্যক্তিগত সংশোধনী সবক। সেদিনের মত অত কষ্ট হয়নি, তবে বহু সময়-দিন পেরিয়ে গেছে। ঐক্যবদ্ধ স্বপ্ন বাস্তবে বিভক্ত হলো। এখনও বিভক্তির পালা বোধ হয় শেষ হয়নি- কেননা ঐক্যের বাঁধন বারবার ছিড়ে যায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার বিশেষ মদদে এখনও মূল দল টিকে আছে মাত্র। এর অগ্রযাত্রা কামনা করি। শুব্বানদের শ্রম, সময়, মনন, চেতনা ও মেধা-পরিশ্রম বুদ্ধি ও পরিমিতবোধ জাগ্রত হোক- এ প্রার্থনা সতত।
(লেখক: সাবেক সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস ও উপদেষ্টা, জমঈয়ত শুব্বানে আহলে হাদীস এবং অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, সরকারী বি.এল কলেজ, খুলনা।)
