জমঈয়তে আহলে হাদীসের রাজনৈতিক দৃষ্টিভংগী ও পলিসি
2025
আল্লামা মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহেল কাফী আল-কোরায়শী (রাহিমাহুল্লাহ!)
জমঈয়ত প্রেসিডেন্ট বলেন, কবরে প্রবেশ না করা পর্যন্ত রাজনীতির প্রভাব এড়াইয়া চলার উপায় নাই, অধিকন্তু ইছলামী রাজনীতি ঈমান ও আমলে ছালেহেরই অপরিহার্য অংশ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ বর্তমানে শুধু পার্লামেন্টারী তৎপরতাকেই রাজনীতি বলিয়া ধরিয়া লওয়া হয়। এই সংজ্ঞা সূত্রে বর্তমানে যতগুলি রাজনৈতিক পার্টি রহিয়াছে, সকলেই পার্লামেন্ট বা মন্ত্রিসভা দখল করার উদ্দেশ্যেই পৃথক পৃথক পার্টি গঠন করিয়াছে, নতুবা জাতীয় কল্যাণের প্রোগ্রাম এবং সত্য ও সঠিক পথ এত সংখ্যাবহুল হইতে পারে না। এক্ষণে জমঈয়তে আহলে হাদীসকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার অর্থ কি? সেও কি মুছলিম লীগ, নিযামে ইছলাম, কৃষক-প্রজা, জামাতে-ইছলামীর মত পৃথক ভাবে জমঈয়তে আহলে হাদীসের পক্ষ হইতে ইউনিয়ন বোর্ড, ডিঃ বোর্ড ও ব্যবস্থা পরিষদের জন্য প্রার্থী দাঁড় করাইবে এবং কোরআন ও হাদীসের নাম লইয়া মুছলিমলীগ, ইছলামী জামাআত প্রভৃতির মনোনীত প্রার্থীর সহিত ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হইবে? ইহা নীতি ও বাস্তবতার দিক দিয়া অচল। নীতির দিক দিয়ে অচল এই জন্য যে, ইহার ফলে অকারণে একটা পার্লামেন্টারী মযহবের সংখ্যা বৃদ্ধি হইবে মাত্র এবং শেষ পর্যন্ত নীতি নৈতিকতার বালাই পরিহার করিয়া দলপরস্তি ও প্রোপাগাণ্ডার নাপাক নর্দমায় অবতরণ করিতে হইবে। বিশেষতঃ পাকিস্তানে এরূপ নির্বাচন কেন্দ্রের সংখ্যা বিরল, যে স্থানে শুধু আহলে হাদীস ভোটদাতাগণের ভোটে কাহারও পক্ষে নির্বাচন দ্বন্দ্বে জয়লাভ করা সম্ভবপর হইতে পারে। আর যদি দুএকটি জায়গায় সম্ভবপর হয় ও, তাহাতে শ্রেনী বিদ্বেষ, জাতিভেদ ও কলহ বিবাদ বাড়িয়া যাওয়া ছাড়া আর কোন লাভ হইবে না এবং তাহাতে তবলীগের মূল কার্য ব্যাহত হইবে। পক্ষান্তরে যদি জমঈয়তকে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার পরিবর্তে অন্য কোন স্বাধীন রাজনৈতিক পার্টির আজ্ঞাবহ লেজুড়ে পরিণত করিয়া উহার স্বাতন্ত্র্য বিলীন করিয়া দেওয়া হয়, তাহা হইলে এই কাজে অগ্রসর হওয়ার পূর্বেই জমঈয়তের কাফন দাফন শেষ করিয়া ফেলা অধিকতর যুক্তিসংগত।
জমঈয়তের সভাপতি বলেন, যেসকল আহলে হাদীস যদৃচ্ছভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে প্রবেশ করিতেছেন, তাঁহাদের কাছে আহলে হাদীসদের আদর্শগত এবং জামাআতী স্বাতন্ত্র্য বলিয়া কিছুই নাই, তাঁহারা জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে আহলে হাদীসদের সংহতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করিতেছেন মাত্র। একান্তই যদি কোন রাজনৈতিক দলে কেহ ভিড়িয়া যাইতে চান, শুধু নির্বাচনী স্বার্থের খাতিরে এরূপ করা বিশ্বাসঘাতকতামূলক হইবে, অবশ্য জামাআতের পরামর্শ ও সম্মতি অনুসারে এরূপ করা চলিতে পারে।
জমঈয়ত সভাপতি বলেন, পার্লামেন্টারী কোন পার্টি গঠন করা অথবা এরূপ অন্য কোন পার্টিতে বিলীন হওয়ার পরিবর্তে আমরা কোরআন ও ছুন্নতে-খালিছা ভিত্তিক রাজনীতির আদর্শ ও লক্ষ্য অকুতোভয়ে প্রচার করিতে থাকিব, ইসলামী আদর্শের প্রতিকূল সমুদয় স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রনীতি ও কার্যকলাপের প্রতিবাদ করিব। জমঈয়তে আহলে হাদীসেকে এরূপ সংগঠনে পরিণত করিতে হইবে, যাহাতে কেহ প্রলুব্ধ ও প্রতারিত করার সুযোগ না পায়। যে বা যাহারা অথবা যে পার্টি ইসলাম ও পকিস্তানের সত্যকার সেবক হইবে, আহলে হাদীসগণ দলনিরপেক্ষ ও পক্ষপাতশূন্য হইয়া তাহাদিগকেই সমর্থন করিবে। যাহারা কোরআন, ছুন্নাহ ও পাকিস্তান সম্পর্কে জমঈয়তে আহলে হাদীসের শ্রদ্ধা লাভ করিবেনা, তাহারা জমঈয়তের বিবেচনায় কোন ক্রমেই ভোট লাভের যোগ্য বিবেচিত হইবেনা।
মাসিক তর্জুমানুল হাদীস
৭ম বর্ষ ৪র্থ ও ৫ম সংখ্যা
চৈত্র-বৈশাখ ১৩৬৩-৬৪ মার্চ-এপ্রিল
জমঈয়ত প্রেসিডেন্ট বলেন, কবরে প্রবেশ না করা পর্যন্ত রাজনীতির প্রভাব এড়াইয়া চলার উপায় নাই, অধিকন্তু ইছলামী রাজনীতি ঈমান ও আমলে ছালেহেরই অপরিহার্য অংশ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ বর্তমানে শুধু পার্লামেন্টারী তৎপরতাকেই রাজনীতি বলিয়া ধরিয়া লওয়া হয়। এই সংজ্ঞা সূত্রে বর্তমানে যতগুলি রাজনৈতিক পার্টি রহিয়াছে, সকলেই পার্লামেন্ট বা মন্ত্রিসভা দখল করার উদ্দেশ্যেই পৃথক পৃথক পার্টি গঠন করিয়াছে, নতুবা জাতীয় কল্যাণের প্রোগ্রাম এবং সত্য ও সঠিক পথ এত সংখ্যাবহুল হইতে পারে না। এক্ষণে জমঈয়তে আহলে হাদীসকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার অর্থ কি? সেও কি মুছলিম লীগ, নিযামে ইছলাম, কৃষক-প্রজা, জামাতে-ইছলামীর মত পৃথক ভাবে জমঈয়তে আহলে হাদীসের পক্ষ হইতে ইউনিয়ন বোর্ড, ডিঃ বোর্ড ও ব্যবস্থা পরিষদের জন্য প্রার্থী দাঁড় করাইবে এবং কোরআন ও হাদীসের নাম লইয়া মুছলিমলীগ, ইছলামী জামাআত প্রভৃতির মনোনীত প্রার্থীর সহিত ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হইবে? ইহা নীতি ও বাস্তবতার দিক দিয়া অচল। নীতির দিক দিয়ে অচল এই জন্য যে, ইহার ফলে অকারণে একটা পার্লামেন্টারী মযহবের সংখ্যা বৃদ্ধি হইবে মাত্র এবং শেষ পর্যন্ত নীতি নৈতিকতার বালাই পরিহার করিয়া দলপরস্তি ও প্রোপাগাণ্ডার নাপাক নর্দমায় অবতরণ করিতে হইবে। বিশেষতঃ পাকিস্তানে এরূপ নির্বাচন কেন্দ্রের সংখ্যা বিরল, যে স্থানে শুধু আহলে হাদীস ভোটদাতাগণের ভোটে কাহারও পক্ষে নির্বাচন দ্বন্দ্বে জয়লাভ করা সম্ভবপর হইতে পারে। আর যদি দুএকটি জায়গায় সম্ভবপর হয় ও, তাহাতে শ্রেনী বিদ্বেষ, জাতিভেদ ও কলহ বিবাদ বাড়িয়া যাওয়া ছাড়া আর কোন লাভ হইবে না এবং তাহাতে তবলীগের মূল কার্য ব্যাহত হইবে। পক্ষান্তরে যদি জমঈয়তকে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার পরিবর্তে অন্য কোন স্বাধীন রাজনৈতিক পার্টির আজ্ঞাবহ লেজুড়ে পরিণত করিয়া উহার স্বাতন্ত্র্য বিলীন করিয়া দেওয়া হয়, তাহা হইলে এই কাজে অগ্রসর হওয়ার পূর্বেই জমঈয়তের কাফন দাফন শেষ করিয়া ফেলা অধিকতর যুক্তিসংগত।
জমঈয়তের সভাপতি বলেন, যেসকল আহলে হাদীস যদৃচ্ছভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে প্রবেশ করিতেছেন, তাঁহাদের কাছে আহলে হাদীসদের আদর্শগত এবং জামাআতী স্বাতন্ত্র্য বলিয়া কিছুই নাই, তাঁহারা জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে আহলে হাদীসদের সংহতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করিতেছেন মাত্র। একান্তই যদি কোন রাজনৈতিক দলে কেহ ভিড়িয়া যাইতে চান, শুধু নির্বাচনী স্বার্থের খাতিরে এরূপ করা বিশ্বাসঘাতকতামূলক হইবে, অবশ্য জামাআতের পরামর্শ ও সম্মতি অনুসারে এরূপ করা চলিতে পারে।
জমঈয়ত সভাপতি বলেন, পার্লামেন্টারী কোন পার্টি গঠন করা অথবা এরূপ অন্য কোন পার্টিতে বিলীন হওয়ার পরিবর্তে আমরা কোরআন ও ছুন্নতে-খালিছা ভিত্তিক রাজনীতির আদর্শ ও লক্ষ্য অকুতোভয়ে প্রচার করিতে থাকিব, ইসলামী আদর্শের প্রতিকূল সমুদয় স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রনীতি ও কার্যকলাপের প্রতিবাদ করিব। জমঈয়তে আহলে হাদীসেকে এরূপ সংগঠনে পরিণত করিতে হইবে, যাহাতে কেহ প্রলুব্ধ ও প্রতারিত করার সুযোগ না পায়। যে বা যাহারা অথবা যে পার্টি ইসলাম ও পকিস্তানের সত্যকার সেবক হইবে, আহলে হাদীসগণ দলনিরপেক্ষ ও পক্ষপাতশূন্য হইয়া তাহাদিগকেই সমর্থন করিবে। যাহারা কোরআন, ছুন্নাহ ও পাকিস্তান সম্পর্কে জমঈয়তে আহলে হাদীসের শ্রদ্ধা লাভ করিবেনা, তাহারা জমঈয়তের বিবেচনায় কোন ক্রমেই ভোট লাভের যোগ্য বিবেচিত হইবেনা।
মাসিক তর্জুমানুল হাদীস
৭ম বর্ষ ৪র্থ ও ৫ম সংখ্যা
চৈত্র-বৈশাখ ১৩৬৩-৬৪ মার্চ-এপ্রিল
