সভাপতির অভিভাষণ
1965
(রংপুর জেলা আহলে হাদীস কনফারেন্স, ২৩শে ও ২৪শে এপ্রিল, ১৯৬৫)
ডক্টর মোহাম্মদ আবদুল বারী ডি-ফিল ।।
بسم الله الرحمن الرحيم الحمد لله ذي المجد والكرم الذي علم بالقلم علم الإنسان ما لم يعلم والصلوة والسلام على رسوله محمد سيد العرب والعجم الذي جاء بالقرآن المجز فأقحم البلغاء وأبكم وعلى آله وأصحابه الذين بلغوا عليه بالسنان واللسان و القلم
অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি, প্রতিনিধিবৃন্দ, উলামায়ে কেরাম এবং সমবেত বন্ধুগণ,
ইখতিয়ারুদ্দীন মুহাম্মদ বিন বাখতিয়ার খালজীর স্মৃতিবিজড়িত এই ঐতিহাসিক নগরীতে রংপুর জেলা আহলে হাদীস কনফারেন্সে সম্মি-লিত হ'তে পেরেছি বলে সর্বপ্রথম সর্বসিদ্ধিদাতা রাব্বুল আলামীনের শোকর আদা করছি। অভ্যর্থনা
সমিতি বিভিন্ন বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়েও অতি অল্প সময়ে অতি সুন্দর ও মনোরম আয়োজন করে আমাদের কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করলেন। যাঁদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও আগ্রহে আজকের এই মহতী অধিবেশন সম্ভবপর হয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে এবং আমাদের একমাত্র জামাআতী প্রতিষ্ঠান-পূর্ব পাক জমঈয়তে আহলে-হাদীসের তরফ থেকে তাঁদের মোবারকবাদ জানাই।
রংপুর জেলা আহলে হাদীস কনফারেনসের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার গৌরব দান করে আমার প্রতি আপনারা যে স্নেহ ও সম্মান প্রদর্শন করেছেন তার জন্য আপনাদের কাছে আমি অত্যন্ত মামনুন; আপনারা আমার ধন্যবাদ গ্রহণ করুন! যোগ্যতর কাঁধে এ গুরু দায়িত্বভার অর্পিত হ'লে সব দিক দিয়ে শোভন হোত বলে আমি মনে করি। স্বীয় অযোগ্যতা ও অনবসরতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকেফহাল হ'য়েও প্রধানতঃ দু'টি কারণে আপনাদের বিলম্বিত মনোনয়ন আমি আনন্দের সাথে গ্রহণ করেছি।
বর্তমান শতাব্দীর দ্বিতীয় শতকের শুরুতে এই জেলার -মুসলিম অধিবাসীদের বিষয়ে বলতে গিয়ে A Vas সাহেব রংপুরের District Gazetteer এ মন্তব্য করেছিলেন:
"Almost all the muhammadans of the district are sunnis. There is a very small sect who are indifferently, known as muhamm-adis, Farazis, Sharais or Rafi yadains, They are orthodox followers of the koran and the Hadis or Tradi-tions. They do not venerate the pirs, nor do they celebrate the moulood-the anniversary of the birth of the Prophet.
অর্থাৎ "(জেলার) প্রায় সব মুসলমান ই সুন্নী। (এ ছাড়া) একটি খুব ছোট দল আছে যারা মুহাম্মদী, ফারাযী, শারায়ী এবং রাফ ই- ইদায়ন ইত্যাদি বিভিন্ন নামে পরিচিত। এরা কোরান ও হাদীসের একনিষ্ঠ অনুসারী। এরা পীরের পূজা করেনা এবং রসূলের জন্মদিনে মওলুদ পাঠ করেনা "
Vas বর্ণিত সে দিনের অতি ক্ষুদ্র দলটি আজ আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহে বৃহৎ জামাআতে পরিণত হয়েছে। বিদেশী রাজ কর্মচারী যাঁদের 'সুন্নী' বলতে প্রস্তুত ছিলেন না, কিতাব ও সুন্নাহর অকুণ্ঠ অনুসরণ তাঁদের দান করেছে আলহাদীসের 'তরজুমানের সম্মান। তাঁদের - নকীবরা আজ শহরে পল্লীতে প্রচার করে চলেছেন 'আরাফাতের' মহামিলনের আহবান। আজকের -এই অধিবেশন আপনাদের আত্মপ্রতিষ্ঠা ও আত্মো পলব্ধির অভিব্যক্তি মাত্র। হারাগাছের শপথ আজি রূপ নিয়েছে রংপুর শহরে এই কনফারেন্স অনুষ্ঠানের মাধ্যমে! আপনারা আমার মোবারক বাদ গ্রহণ করুন!
অন্য কারণটি হল ব্যক্তিগত। রংপুরের সাথে আমাদের সম্পর্ক অনেক পুরনো। আমার পিতামহ মরহুম আল্লামা আবদুল হাদী সাহেব-অবিমিশ্র সুন্নাহর অনুসরণের পাপে (?) জন্ম-ভূমি থেকে হয়ে ছিলেন বহিষ্কৃত. আত্মীয় স্বজন কর্তৃক পরিত্যক্ত! বর্তমানে পশ্চিম বঙ্গের হুগলী বর্ধমান এলাকায় যখন তিনি অবস্থান করছিলেন তখন তাঁর উসতায শায়খুল ইসলাম হযরত মওলানা সাইয়েদ নাযীর হুসেন সাহেব দেহলভীর নির্দেশক্রমে উত্তর বঙ্গে ইসলাম প্রচারে এসে এই জেলার বদরগঞ্জ থানার লালবাড়ী গ্রামে তিনি বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর সুযোগ্য সন্তান পূর্ব পাক জমঈয়তে আহলে হাদীসের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি হযরতুল আল্লামা মওলানা মুহাম্মদ আবদুল্লাহেল কাফী আল কুরায়শী সাহেব (রহঃ) তাঁর শৈশব ও কৈশোরের কিছু সময় কাটিয়েছিলেন এই শহরে। আজ যে বিদ্যালয়ের মাঠে আপনাদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সে বিদ্যালয়ের তিনি ছিলেন ছাত্র। আমার জন্য তাই আপনাদের দাওয়াত ছিল পরম লোভনীয়। জ্ঞানী গুণীরা অবশ্য বলবেন: লোভ সংবরণ করা বুদ্ধিমানের কাজ।
বন্ধুগণ, আমাদের জাতীয় ইতিহাস নতুন করে লিখার উদ্যোগ আয়োজন চলেছে। এ সময়ে 'আহলে হাদীস' নাম শুনে বেশামাল হয়ে পড়লে চলবেনা। এঁদের সাথে আপনাদের -প্রত্যক্ষভাবে পরিচিত হ'তে হ'বে। এঁদের সাফল্য ও ব্যর্থতার ইতিহাস আপনাদের জানতে হবে। এঁদের সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সেবা ও খেদমাত সম্পর্কে আপনাদের অবহিত হতে হবে। উইলিয়ম উইলসন হান্টারের রোগ-গ্রস্ত চোখ দিয়ে না দেখে নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে এঁদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম আপনাদের পর্যালোচনা করতে হ'বে। আপনাদের স্বাধীনতা আন্দোলন কি ১৯৩০ সালে এলাহাবাদে শুরু হয়েছিল? স্বাধীনতার শপথ আমরা কি শুধু ১৯৪০ সালে লাহোরে গ্রহণ করেছিলাম? ১৯০৬ সালে ঢাকা নগরীতে মুসলিম লীগের জন্ম মুহূর্তেই কি আযাদীর আওয়ায ধ্বনিত হয়ে উঠেছিল উপমহাদেশের প্রতিটি শহর ও পল্লিতে? আমরা যখন হিন্দুস্তানী ও বাঙ্গালী, পাঞ্জাবী ও সিন্ধি, পাঠান ও মোপলাতে বিভক্ত হয়ে সাম্রাজ্য-বাদীদের রাজ্য বিস্তারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করছিলাম, দেশ ও জাতির সে দুর্দিনে ইংরেজদের মতলব কারা ফাঁস করে দিয়েছিল? হিন্দভূমি 'দারুল হারবে' পরিণত হওয়ায় কারা হৃত আযাদী পুনরুদ্ধারের জন্য জানমাল কোরবান করেছিল? দীন-ই-ইলাহীর মায়াজালে আমরা যখন আবদ্ধ হয়ে পড়ছিলাম, 'মাজমাউল বাহরানে'র ক্লিন্ন জলে আমরা যখন অবগাহন করছিলাম, পাঁচ পীর-সত্যপীর-কালু গাঙ্গীর পুজারী হয়ে আমরা যখন অভিন্ন ভারতীয় লোক-ধর্মের জয়গান করছিলাম, আমাদের একদল যখন 'ভারতের মহামানবের সাগর তীরে' 'এক দেহে' 'লীন হবার সাধনায় রত ছিলেন, তাসাউউফ ও সুফীবাদের নামে দেশ যখন ন্যাড়া ফকিরে ছেয়ে গিয়েছিল অথবা পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সভ্যতার নামে প্রাচ্যের সব কিছু বর্জন করা যখন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তখন স্বতন্ত্র মুসলিম জাতীয়তা বোধের পবিত্র আমানতকে কারা সযত্নে রক্ষা করেছিল? পাকিস্তানের ঐতিহাসিকদের এ সকল প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে হ'বে।
বন্ধুগণ, বিভিন্ন দল ও উপদলগুলির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ব্যক্তি বিশেষকে কেন্দ্র করেই এগুলির উৎপত্তি ও বিস্তৃতি ঘটেছে। "রাজনৈতিক ও মযহাবী ফিকাবন্দীর ইতিহাসে ব্যক্তিবিশেষের প্রাধান্য এরূপ গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে রয়েছে যে, ফির্কা বা পার্টির অন্তর্ভুক্ত কোন ব্যক্তি আদর্শের প্রতি নিষ্ঠা ও কর্মসূচীর অনুসরণের দিক দিয়ে যতই অগ্রগণ্য হোক না কেন, ফির্কার ইমাম বা পার্টির নেতার পুরাপুরি ভক্ত ও অনুগত না হওয়া পর্যন্ত তার শিক্ষা ও কর্মতৎপরতার কোন মূল্যই স্বীকৃত হয় না। আদর্শনিষ্ঠা ও কর্মতৎপরতা অপেক্ষা ফির্কাবন্দীর ইতিহাসে দলীয় নেতার প্রতি ব্যক্তিগত আনুগত্য এবং তার অন্ধ অনুসরণ বা 'তাকলীদ'কে অধিক মূল্য দেয়া হয়ে থাকে। ফির্কাপরস্তের দল কালক্রমে দলপতির ভ্রম ও প্রমাদগুলি একান্তশ্রদ্ধা ও নিষ্ঠার সাথে অনুসরণ করে চলতে থাকে এবং দলীয় আদর্শ ও কর্মসূচীর নামে দলপতির ব্যক্তিগত উক্তি ও আচরণের বিরোধ ঘটলে অন্ধ ভক্তের দল নেতার উক্তি ও আচরণ-কেই প্রাধান্য দান করে। ফলে আদর্শ নিষ্ঠা ও কর্মতৎপরতার পরিবর্তে গোঁড়ামী ও অহমিকা ফির্কার সকল কার্য্যকলাপের উপর প্রভাব বিস্তার করে বসে।
পক্ষান্তরে 'তাহরীকে আহলে হাদীস' একটি আদর্শ ভিত্তিক আন্দোলন। আহলে হাদীসদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম শাহ্ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী স্বীয় অমর গ্রন্থ হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগায় বলছেন:
فَإِذا لم يَجدوا فِي كتاب الله أخذُوا سنة رَسُول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَوَاء كَانَ مستفيضا دائرا بَين الْفُقَهَاء، أَو يكون مُخْتَصًّا بِأَهْل بلد أَو أهل بَيت أَو بطرِيق خَاصَّة، وَسَوَاء عمل بِهِ الصَّحَابَة وَالْفُقَهَاء، أَو لم يعملوا بِهِ،
অর্থাৎ "কোন সমস্যার সমাধান আল্লাহ পাকের পবিত্র গ্রন্থ আল্-কোরআনে পাওয়া না গেলে আহলে হাদীসরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ও সাল্লামের হাদীস থেকে তা গ্রহণ করে থাকেন-সে হাদীস মুসলিম ব্যবহাব শাস্ত্রবিদদের মধ্যে প্রচারিত থাকুক অথবা কোন নির্দিষ্ট নগর-বা পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুক; (সে হাদীস বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হোক) বা মাত্র একটি সনদে বিবৃত হোক; সে হাদীসের উপরে সাহাবা ও ফকীহগণ আমল করে থাকুন আর না থাকুন।" শাহ সাহেব আরও বলেছেনঃ
وَمَتى كَانَ فِي الْمَسْأَلَة حَدِيث فَلَا يتبع فِيهِ خلاف أثر من الْآثَار، وَلَا اجْتِهَاد أحد من الْمُجْتَهدين،
অর্থাৎ, 'কোন সমস্যার সমাধান রসূলুল্লাহর -(সঃ) হাদীসে পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কোন সাহাব', তাবেয়ী, ইমাম ও মুজতাহিদের সিদ্ধান্তের অনুসরণ আহলে হাদীসগণ করবেন না"।
আহলে হাদীস আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য ব'লে উল্লিখিত হলেও হাদীসের এই সার্বভৌমত্ব মুসলমানদের কোন দল আদর্শগত ভাবে অস্বীকার করতে পারেননি। আহলে হাদীসদের ন্যায় সুন্নাহ পন্থী অন্যান্য স্কুলগুলিও কোরআনের পর হাদীসকে দলীল হিসাবে সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করেছেন। সেজন্য সমষ্টিগতভাবে তাঁরা 'আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত' নামে পরিচিত। কিন্তু হাদীসের প্রামাণিকতা স্বীকার করা আর তাকে পরিপূর্ণভাবে গ্রহন করে যথাযথ অনুসরণ করা এক কথা নয়। মুহাদ্দিস দেহলভীর উক্তি বিশ্লেষণ করলে আমাদের এ উপসংহারে অবশ্যই উপনীত হতে হবে যে, হাদীস গ্রহন ও অনুসরণ করার যে নীতি আহলে হাদীসগণ অবলম্বন করেছেন অন্যান্য দলের জন্য তা অনুসরণীয় নয়। দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যেতে পারে যে, শাফেয়ীগণ শুধুমাত্র সে হাদীসগুলিরই অনুসরণ করেন যেগুলি তাঁদের ইমাম বা স্কুল কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) কর্তৃক গৃহীত বা তাঁর মযহাব কর্তৃক অনুসৃত এমনকি কোন বিশুদ্ধ হাদীসকেও গ্রহণ করতে তারা রাযী নন। তাঁদের ক্ষেত্রে তাই হাদীসের অনুসরণ ইমামের অনুসরণের নামান্তর মাত্র। কোরআন ও হাদীসের প্রত্যক্ষ ও অকুণ্ঠ অনুসরণের পরিবর্তে তাঁরা স্বীয় নেতার অভিমত বা সিদ্ধান্ত মাত্র অনুসরণ করেন এবং মাযহাবের প্রতিকূল কোন হাদীস তাহকীক ক্ষেত্রে অধিকতর গ্রহনযোগ্য বলে প্রমাণিত হ'লেও তার পরোক্ষ ব্যাখ্যায় প্রবৃত্ত হন। ফলে কোরআন ও হাদীসের সর্বভৌমত্ব আজ বিলুপ্ত হ'তে বসেছে। রসূলুল্লাহ (দঃ) এর নির্দেশ প্রতিপালন আজ ইমাম, মুজতাহিদ, অলি, দরবেশ ও পীর সাহেবানের অনুমতি ও অনু-মোদনসাপেক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ তাই আমাদের স্মারণ করা উচিত দ্বিতীয় শতকের স্বনামধন্য ফকীহ ইমাম সুফয়ান সাওয়ীর বাণী:
لا يقبل قول الا بعمل ولا يستقيم قول وعمل الا بنية ولا يستقيم قول وعمل ونية الا بموافقة السنة .
অর্থাৎ "আমল ছাড়া মুখের কথা গ্রহণযোগ্য নয়; আবার নীয়তের বিশুদ্ধতা ছাড়া কথা ও কাজ সার্থক হয়না এবং রসূলুল্লাহ (দঃ) এর আদর্শের অনুরূপ না হওয়া পর্যন্ত কোন কথা, কাজ বা নীয়ত বিশুদ্ধ হ'তে পারে না।"
যাঁরা মনে করেন যে, আহলে হাদীসরা একটি নতুন মতবাদ প্রচার করছে বা তাদের কার্যতৎপরতা শুধুমাত্র হিন্দ-পাকিস্তানে সীমাবদ্ধ রয়েছে তাঁদের আমি উস্তায আবু মনসুর আবদুল কাহের বাগদাদীর 'উসূলুদ দীন' গ্রন্থ পড়ে দেখতে অনুরোধ করি। উসতায বাগদাদীর মতে আরব, শাম, ইরাক, ইরান, মিসর, য়ামন ও আফ্রিকা-এশিয়া সীমান্তবর্তী এলাকার অধিবাসীবৃন্দ সকলেই হিজরী দ্বিতীয় শতক পর্যন্ত আহলে হাদীস মতালম্বী ছিলেন। স্বনামখ্যাত ভৌগলিক আল মাকদেসী তাঁর 'আহসানুত তাকাসীম' গ্রন্থে মুসলিম বিজীত হিন্দু এলাকার বিবরণ লিপিবদ্ধ করতে গিয়ে বলেছেন: "এবং মুসলমানগণ অধিকাংশই আহলে হাদীস।" ইসলামের প্রথম যুগে সকলেই নিজকে মুসলিম নামে আখ্যাত করতেন। শিয়া-খারেজী, জাহমী-মুতাযিলী, রাফেযী-নাসেবী, মুরজিই-মুআত্তিলা প্রভৃতি ফিৎনার উদ্ভব হ'লে পরই মাত্র আল-কোরআন ও আল-হাদীসের অকুণ্ঠ অনুসরণে অবিচল মুসলিমবৃন্দ আহলে হাদীসরূপে নিজদের পরিচিত করতেন এবং অন্যান্যরা সেভাবে তাঁদের গ্রহণ করতেন। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন:
ومن أهل السنة والجماعة مذهب قديم معروف قبل أن يخلق الله أبا حنيفة ومالك والشافعي وأحمد فإنه مذهب الصحابة الذين تلقوه من نبيهم ومن خالف ذلك كان مبتدعا عند أهل السنة والجماعة .
অর্থাৎ “আল্লাহ তাআলা আবু হানীফা, মালেক, শাফেয়ী ও আহমদ-মহামতি ইমাম চতুষ্টয়কে সৃষ্টি করারও পূর্বে আহলে সুন্নাতের একটি সনাতন ও সুপরিচিত মযহাব ছিল। এটা সাহাবাদের মাযহাব যা তাঁরা তাঁদের নবী (দঃ) এর নিকট থেকে শিক্ষা করেছিলেন। যে ব্যক্তি এই মাযহাবের বিরোধিতা করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতে তারা বিদআতী বলে প্রতিপন্ন হবে।"
হিদায়ার টীকা এনায়ার বিবরণ মতে হাযরাত ইমাম আবু হানীফার যামানাতেও আহলে হাদীসরা সমভাবে বিদ্যমান ছিলেন। হযরত ইমাম সাহেব যখন বাগদাদে প্রবেশ করেন তখন সরস খেজুরের বিনিময় সুসিদ্ধ কিনা সে নিয়ে আহলে হাদীসদের সাথে তাঁর বিতর্ক হয়।
আল্লামা সাইয়েদ মুহাম্মদ আমীন বিন আবেদীন শাফী হানাফী ফিকহের গ্রন্থ রদ্দুল মুহতার (৩১৩পৃ) المحتار رد এ তাতারখানিয়া ও ফাতাওয়ায়ে ছাম্মাদীয়ার বরাত দিয়ে উল্লেখ করেছেন:
حكي أن رجلا من أصحاب أبي حنيفة خطب إلى رجل من أصحاب الحديث ابنته في عهد أبي بكر الجوزجاني فأبى إلا أن يترك مذهبه فيقرأ خلف الإمام، ويرفع يديه عند الانحناء ونحو ذلك فأجابه فزوجه،
অর্থাৎ কথিত আছে, ইমাম আবু বকর জুযজানীর আমলে জনৈক হানাফী কোন আহলে হাদীসের নিকট তার কন্যার পাণি প্রার্থনা করে। আহলে হাদীস লোকটি জানায় যে, হানাফী তার মাযহাব ত্যাগ করে ইমামের পিছনে সূরা ফাতেহা পাঠ এবং রুকুতে যাওয়া এবং রুকু থেকে উঠার সময় হাত না উঠান অর্থাৎ রাফ-ই-ইদায়ন ইত্যাদী আহলে হাদীস মাযহাবের কাজ না করা পর্যন্ত সে তাকে কন্যা দান করবে না। হানাফী ব্যক্তি কন্যার পিতার শর্ত গ্রহণ করাতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।" এগুলো উদ্ধৃতি থেকে এ কথা অবিসংবাদিতরূপে প্রমাণিত হয় যে, ইসলামের ইতিহাসের সকল যুগে সর্বদেশে আহলে হাদীসরা স্বীয় মতে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন। (তাকলীদ সম্পর্কে এই আলোচনা মূলতঃ আল্লামা আবদুল্লাহেল কাফী আল কোরায়শী (রহঃ) কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন অভিভাষণ-যেগুলি 'আহলে হাদীস পরিচিতি' নামক পুস্তকে সংকলিত হয়েছে-এর উপর ভিত্তি করে বিরচিত।)
বন্ধুগণ, নিজেদেরকে আহলে হাদীসরূপে পরিচয় দান করলেই কি আমরা বেহেশতের সার্টিফিকেট লাভ করব? না ঈমান ও আমলে, আখলাক ও মুআমালাতে সম্পূর্ণরূপে ইসলামী জীবন যাপন করলে-মাত্র আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অনুগ্রহ লাভের আশা করতে পারি? আমার মুখে আহলে হাদীস হ'ব' না, কথায় ও কাজে আল কোরআন ও আস্-সুন্নাহর অনুসারী হ'ব? আমাদের গঠনতন্ত্রের দ্বিতীয় ধারার ব্যাখ্যাতে বলা হয়েছে যে, আমাদের আন্দোলনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হোল: ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, তমদ্দুনী, রাষ্ট্রিক, ব্যবহারিক ও আধ্যাত্ম-জীবনের যে পূর্ণাংগ ও সর্বশেষ বিধান আল্লাহ তদীয় শেষ নরী ও রসূলগণের সম্রাট, নিখিল ধরণীর রহমত হযরত মোহাম্মদ মুছতফার (দঃ) মাধ্যমে বিশ্ববাসীর নিকট প্রেরণ করিয়াছেন, স্বয়ং তাহা অনুসরণ করিয়া চলা এবং জীবনের প্রতি স্তরে উক্ত বিধানকে বাস্তবায়িত করার জন্য আগ্রহশীল ও কর্মতৎপর হওয়া।"
আজ আমাদের নিজেদের জিজ্ঞাসা করে -দেখার সময় এসেছে যে, আমরা ক'জন আমাদের এ উদ্দেশ্য সফল ও সার্থক করে তোলার জন্য সজ্ঞানে ও সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করি। আমাদের মধ্যে যারা নিজেদেরকে আহলে হাদীসরূপে পরিচয় দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন বা আজকের কনফারেন্সের মত কনফারেন্স অনুষ্ঠানের মধ্যে ব্যক্তিগত লাভ ক্ষতির আঁচ করেন তাঁদের কথা অবশ্য স্বতন্ত্র। তাঁরা নিজেদের বিস্মৃত হয়েছেন এবং প্রভুর পথ থেকেও বিচ্যুত হ'তে চলেছেনঃ
وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ نَسُواْ ٱللَّهَ فَأَنسَىٰهُمۡ أَنفُسَهُمۡۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ سُورَةُ الحَشرِ: ١٩
অর্থাৎ "যে সকল জাতি আল্লাহকে বিস্মৃত হয়েছে, হে মুসলিমবৃন্দ, তোমরা তাদের মত হয়োনা। আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার অনিবার্য্য পরিণতি স্বরূপ তারা, নিজেদেরও বিস্মৃত হয়েছে; বস্তুতঃ তারা অনাচারী।"
বন্ধুগণ, আযাদী হাসেলের প্রাক্কালে জাতির জনক কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেছিলেন:
"We maintain and hold that Muslims and Hindus are two major nations by any definition or test of a nation. We are a nation of a hundred million, and, what is more, we are a nation with our own distinctive culture and civilization, language and literature, art and architecture, names and nomenclature, sense of value and proportion, legal laws and moral codes, customs and calendar, history and traditions, aptitudes and ambitions, in short, we have our own distinctive outlook on life and of life."
অর্থাৎ "আমরা এই দৃঢ় মত পোষণ করি যে, জাতীয়তার যে কোন-সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা অনুসারে মুসলিম ও হিন্দু দু'টি পৃথক জাতি। দশ কোটি অধিবাসীর সমবায়ে আমরা একটি জাতি এবং তার চেয়েও বড় কথা এ জাতির একটি সুষ্পষ্ট ও নিজস্ব দৃষ্টি ও তমদ্দুন, ভাষা ও সাহিত্য, কলা ও স্থাপত্য, নাম ও সংজ্ঞা, মূল্য ও পরিমাণ বোধ,
আইন-কানুন ও নীতিবোধ, রীতিনীতি ও পঞ্জিকা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, কর্ম-কুশলতা ও উচ্চাভিলাস বিদ্যমান রয়েছে। সংক্ষেপে জীবন ও জীবনের আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে আমাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে।" (Z. A. Suleri প্রণীত My Leader গ্রন্থ দ্রষ্টব্য)
পাকিস্তান হাসিলের পর ঈদুল ফিতরের বিরাট জামাআ'তকে লক্ষ্য করে কায়েদে আযম আরও বলেছিলেন:
مسلمانو همارا پروگرام قرآن پاک میں موجود ھے ھم مسلمانون کو لازم ھے کہ قرآن پاک کو غور سے پڑھین اور قرآنی پروگرام کے ھوتے ھوئے مسلم لیگ مسلمانوں کے سامنے کوئی دوسرا پروگرام پیش نہیں کر سکتی ۔
অর্থাৎ "মুসলমানগণ, আমাদের প্রোগ্রাম কোরআন পাকে মওজুদ আছে। অভিনিবেশ সহকারে কোরআন পাক অধ্যয়ন করা আমাদের সকল মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। কোরআনী প্রোগ্রামের বিদ্যমানতায় মুসলিম লীগ মুসলমানদের সম্মুখে দিতীয় কোন কার্য্যসূচী পেশ করতে পারেনা।"
আফসোস, আযাদী হাসিলের মাত্র আঠার বছরের মধ্যে কায়েদে 'আযম বর্ণিত আমাদের স্বাতন্ত্র্যবোধ আমরা হারাতে বসেছি হয়ত বা হারিয়ে ফেলেছি। শহরে পল্লীতে আজ আমাদের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও অনুষ্ঠানের ছড়া-ছড়ি। কিন্তু যে সংস্কৃতির 'কালচার' এ সমস্ত অনুষ্ঠানাদিতে হয়ে থাকে তা কতটা পাকিস্তানী এবং কতটা ইসলাম-সম্মত সে সম্বন্ধে স্বভাবতঃ অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে। আমাদের কথা সাহিত্যিক ও কবিরা আমাদের সভ্যতা ও ইতিহাস থেকে তাঁদের উপাদান ও ins-piration কতটা সংগ্রহ করে থাকেন এবং তাঁদের রচনা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কতটা সার্থক আলেখ্য বিদগ্ধ পণ্ডিত মাত্রই তা অবগত রয়েছেন। আমাদের আইন কানুন, রীতিনীতি ও আচার অনুষ্ঠানে আমাদের মুসলিম জাতীয়তার আদর্শকে আমরা কতটা রূপায়িত করেছি তা আপনারাই বিবেচনা করে দেখুন। পাকিস্তান হাসিলের পূর্বে তবু কিছু সংখ্যক মুসলিম কোরআন অনুধাবন করতে না পারলেও অন্ততঃ
শুদ্ধভাবে পড়তে পারত। আজকের শিক্ষানীতির বাহাদুরিতে কোরআন পাঠকের সংখ্যা দ্রুতগতিতে হ্রাস পাচ্ছে। শিগগিরই হয়ত এমন অবস্থা দেখা দেবে যখন দেখে দেখে জুমআর খুতবা পড়ার মত মুনশী সাহেবদের অভাব আমাদের মাঝে দেখা দেবে। কায়েদে আজম তো কোরআন 'গওর' করে পড়ার উপদেশ দিয়েছিলেন কিন্তু স্কুল কলেজগুলো থেকে আরবী নির্বাসিত ও মাদরাসাগুলোকে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক পরিকল্পনা থেকে সযত্নে বহিভূত করার কল্যাণে আমরা 'আ' 'বা' পড়তেই শিখলামনা, কোরআন পড়ব কখন? আর আমাদের প্রোগ্রাম চোদ্দ শ' বছরের পুরনো এক কিতাব থেকে গ্রহণ করলে আমরা প্রতিক্রিয়া--শীলরূপে নিজেদের প্রতিপন্ন করব না?
রসূলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন,
من أشبع وجاره جائع فليس منا
"যে পেট ভরে পানাহার করল অথচ তার প্রতিবেশী অনশনে রাত্রি অতিবাহিত করল সে আমার উম্মতের অন্তভুক্ত নয়।”
আল্লাহ পাকের নির্দেশ:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَأۡكُلُوٓاْ أَمۡوَٰلَكُم بَيۡنَكُم بِٱلۡبَٰطِلِ سُورَةُ النِّسَاءِ: ٢٩
অর্থাৎ "হে বিশ্বাসপরায়ণ সমাজ, তোমরা তোমাদের ধন সম্পদ অবৈধ উপায়ে উপভোগ করোনা।"
আরও ইরশাদ হয়েছে:
فَأَوۡفُواْ ٱلۡكَيۡلَ وَٱلۡمِيزَانَ وَلَا تَبۡخَسُواْ ٱلنَّاسَ أَشۡيَآءَهُمۡ وَلَا تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ بَعۡدَ إِصۡلَٰحِهَاۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡر لَّكُمۡ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ الأَعۡرَافِ: ٨٥
"অতএব তোমরা মাপ ও ওজন পূর্ণ করবে এবং জনগণকে তাদের প্রাপ্য থেকে প্রতারিত করবে না এবং পরিশুদ্ধির পর তোমরা দুনয়াতে ফাসাদ ছড়াবে না। তোমাদের জন্য এটাই কল্যাণকর যদি তোমরা মোমেন হয়ে থাক।"
কিন্তু আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য, ক্রয় বিক্রয়, কৃষি ও শিল্প ইসলামী ন্যায় পরায়ণতার ভিত্তির 'পরে কি স্থাপিত হয়েছে? সমাজের বৃহত্তম অংশের বৃহত্তম কল্যাণের জন্যই কি আমাদের সকল প্রচেষ্টা নিয়োজিত? কালোবাজারী, মুনাফা-খোরী, উৎকোচ শিকার ও পারমিট কেনা বেচার ঘৃণ্য অভ্যাস কি আমরা পরিত্যাগ করতে পেরেছি। আমাদের পাটকল শ্রমিক ও পাটকল মালিকরা পাট ব্যবসা থেকে কি সমভাবে লাভবান হচ্ছেন? আমরা মনোপলী ও কাটেল প্রথার একনিষ্ঠ অনুসারী হয়ে মাআরিবের লবণখনী সম্পর্কে পরিগৃহ'ত নীতির প্রতি কি সম্মান প্রদর্শন করছি? আমাদের মরহুম নেতার কথায় তাই জিজ্ঞাসা করি:
"তুমি নিজকে ইসলামের মস্ত বড় champion বলে জোর গলায় দাবী করছো, তুমি কি আল্লাহর মনোনীত আদর্শ আর রসূলের নীতিকে মনে প্রাণে মেনে নিয়েছ? রসূলুল্লাহকে (দঃ) কি দ্বীনের একমাত্র ইমামরূপে মেনে নিয়েছ? প্রমাণ কোথায়? এই অসত্য বড়াই ও মিথ্যা ভান গোটা জাতটাকে রসাতলে দিল!"
প্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে আজও যারা মুক্ত নয়, পেট পূর্তির জন্যই যাদের সর্বশক্তি নিঃশেষিত, আত্মকলহ ও ভ্রাতৃবিরোধে যাদের সময় অতিবাহিত, ত্যাগ ও তিতিক্ষা, সংযম ও সহনশীলতার পাঠ নিতে আজও যাদের বাকী অন্যদের আত্ম অনুশীলন ও সংগ্রামের সবক দেয়ার স্পর্ধা তাঁরা কোথায় লাভ করলেন। পরকে সবক দেয়ার পূর্বে নিজেরা সবক গ্রহণ করলে তাঁরা সাধারণ বুদ্ধির পরিচয় দেবেন।
বন্ধুগণ, জামাআতী ঐক্য ও সংহতির পাশে আপনারা আজ যে বলিষ্ঠ পদবিক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তা সত্যই প্রশংসনীয়। আপনাদের উদ্যম সফল হোক! আপনাদের প্রচেষ্টা সার্থক হোক। শুধু মাত্র জেলা জমঈয়ত গঠন করলেই আমাদের সকল সমস্যার সমাধান হবেনা। আজ সবচেয়ে প্রয়োজন হয়েছে জামাআতী ভাই সাহেবানদের তাঁদের কর্তব্য সম্বন্ধে সজাগ করে তোলা। এ বড় কঠিন কাজ। বিংশ শতকের অশান্ত পরিবেশে অনেকেই আজ সংশয়বাদী হয়ে পড়েছেন। আখেরাতের চেয়ে দুনয়ার চিন্তা এঁদের অনেকের মন ও মস্তিষ্ক আছন্ন করে রেখেছে। এ সংশয় ও স্বার্থ চিন্তা থেকে তাঁদের উদ্ধার করা খুব সহজ নয়। তবু আমাদের নিরাশ হ'লে চলবেনা। আমাদের নবী (দঃ) এর মহান আদর্শ আমাদের উৎসাহিত করবে। আমরা ইনশা আল্লাহ এক দিন সফল হবই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তওফিক দান করুন! আমীন !!
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين والصلوة والسلام على رسوله محمد خاتم النبيين وعلى آله وأصحابه أجمعين .
(তর্জুমানুল হাদীস, দ্বাদশ বর্ষ, ৫ম সংখ্যা থেকে গৃহিত)
ডক্টর মোহাম্মদ আবদুল বারী ডি-ফিল ।।
بسم الله الرحمن الرحيم الحمد لله ذي المجد والكرم الذي علم بالقلم علم الإنسان ما لم يعلم والصلوة والسلام على رسوله محمد سيد العرب والعجم الذي جاء بالقرآن المجز فأقحم البلغاء وأبكم وعلى آله وأصحابه الذين بلغوا عليه بالسنان واللسان و القلم
অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি, প্রতিনিধিবৃন্দ, উলামায়ে কেরাম এবং সমবেত বন্ধুগণ,
ইখতিয়ারুদ্দীন মুহাম্মদ বিন বাখতিয়ার খালজীর স্মৃতিবিজড়িত এই ঐতিহাসিক নগরীতে রংপুর জেলা আহলে হাদীস কনফারেন্সে সম্মি-লিত হ'তে পেরেছি বলে সর্বপ্রথম সর্বসিদ্ধিদাতা রাব্বুল আলামীনের শোকর আদা করছি। অভ্যর্থনা
সমিতি বিভিন্ন বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়েও অতি অল্প সময়ে অতি সুন্দর ও মনোরম আয়োজন করে আমাদের কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করলেন। যাঁদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও আগ্রহে আজকের এই মহতী অধিবেশন সম্ভবপর হয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে এবং আমাদের একমাত্র জামাআতী প্রতিষ্ঠান-পূর্ব পাক জমঈয়তে আহলে-হাদীসের তরফ থেকে তাঁদের মোবারকবাদ জানাই।
রংপুর জেলা আহলে হাদীস কনফারেনসের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার গৌরব দান করে আমার প্রতি আপনারা যে স্নেহ ও সম্মান প্রদর্শন করেছেন তার জন্য আপনাদের কাছে আমি অত্যন্ত মামনুন; আপনারা আমার ধন্যবাদ গ্রহণ করুন! যোগ্যতর কাঁধে এ গুরু দায়িত্বভার অর্পিত হ'লে সব দিক দিয়ে শোভন হোত বলে আমি মনে করি। স্বীয় অযোগ্যতা ও অনবসরতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকেফহাল হ'য়েও প্রধানতঃ দু'টি কারণে আপনাদের বিলম্বিত মনোনয়ন আমি আনন্দের সাথে গ্রহণ করেছি।
বর্তমান শতাব্দীর দ্বিতীয় শতকের শুরুতে এই জেলার -মুসলিম অধিবাসীদের বিষয়ে বলতে গিয়ে A Vas সাহেব রংপুরের District Gazetteer এ মন্তব্য করেছিলেন:
"Almost all the muhammadans of the district are sunnis. There is a very small sect who are indifferently, known as muhamm-adis, Farazis, Sharais or Rafi yadains, They are orthodox followers of the koran and the Hadis or Tradi-tions. They do not venerate the pirs, nor do they celebrate the moulood-the anniversary of the birth of the Prophet.
অর্থাৎ "(জেলার) প্রায় সব মুসলমান ই সুন্নী। (এ ছাড়া) একটি খুব ছোট দল আছে যারা মুহাম্মদী, ফারাযী, শারায়ী এবং রাফ ই- ইদায়ন ইত্যাদি বিভিন্ন নামে পরিচিত। এরা কোরান ও হাদীসের একনিষ্ঠ অনুসারী। এরা পীরের পূজা করেনা এবং রসূলের জন্মদিনে মওলুদ পাঠ করেনা "
Vas বর্ণিত সে দিনের অতি ক্ষুদ্র দলটি আজ আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহে বৃহৎ জামাআতে পরিণত হয়েছে। বিদেশী রাজ কর্মচারী যাঁদের 'সুন্নী' বলতে প্রস্তুত ছিলেন না, কিতাব ও সুন্নাহর অকুণ্ঠ অনুসরণ তাঁদের দান করেছে আলহাদীসের 'তরজুমানের সম্মান। তাঁদের - নকীবরা আজ শহরে পল্লীতে প্রচার করে চলেছেন 'আরাফাতের' মহামিলনের আহবান। আজকের -এই অধিবেশন আপনাদের আত্মপ্রতিষ্ঠা ও আত্মো পলব্ধির অভিব্যক্তি মাত্র। হারাগাছের শপথ আজি রূপ নিয়েছে রংপুর শহরে এই কনফারেন্স অনুষ্ঠানের মাধ্যমে! আপনারা আমার মোবারক বাদ গ্রহণ করুন!
অন্য কারণটি হল ব্যক্তিগত। রংপুরের সাথে আমাদের সম্পর্ক অনেক পুরনো। আমার পিতামহ মরহুম আল্লামা আবদুল হাদী সাহেব-অবিমিশ্র সুন্নাহর অনুসরণের পাপে (?) জন্ম-ভূমি থেকে হয়ে ছিলেন বহিষ্কৃত. আত্মীয় স্বজন কর্তৃক পরিত্যক্ত! বর্তমানে পশ্চিম বঙ্গের হুগলী বর্ধমান এলাকায় যখন তিনি অবস্থান করছিলেন তখন তাঁর উসতায শায়খুল ইসলাম হযরত মওলানা সাইয়েদ নাযীর হুসেন সাহেব দেহলভীর নির্দেশক্রমে উত্তর বঙ্গে ইসলাম প্রচারে এসে এই জেলার বদরগঞ্জ থানার লালবাড়ী গ্রামে তিনি বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর সুযোগ্য সন্তান পূর্ব পাক জমঈয়তে আহলে হাদীসের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি হযরতুল আল্লামা মওলানা মুহাম্মদ আবদুল্লাহেল কাফী আল কুরায়শী সাহেব (রহঃ) তাঁর শৈশব ও কৈশোরের কিছু সময় কাটিয়েছিলেন এই শহরে। আজ যে বিদ্যালয়ের মাঠে আপনাদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সে বিদ্যালয়ের তিনি ছিলেন ছাত্র। আমার জন্য তাই আপনাদের দাওয়াত ছিল পরম লোভনীয়। জ্ঞানী গুণীরা অবশ্য বলবেন: লোভ সংবরণ করা বুদ্ধিমানের কাজ।
বন্ধুগণ, আমাদের জাতীয় ইতিহাস নতুন করে লিখার উদ্যোগ আয়োজন চলেছে। এ সময়ে 'আহলে হাদীস' নাম শুনে বেশামাল হয়ে পড়লে চলবেনা। এঁদের সাথে আপনাদের -প্রত্যক্ষভাবে পরিচিত হ'তে হ'বে। এঁদের সাফল্য ও ব্যর্থতার ইতিহাস আপনাদের জানতে হবে। এঁদের সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সেবা ও খেদমাত সম্পর্কে আপনাদের অবহিত হতে হবে। উইলিয়ম উইলসন হান্টারের রোগ-গ্রস্ত চোখ দিয়ে না দেখে নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে এঁদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম আপনাদের পর্যালোচনা করতে হ'বে। আপনাদের স্বাধীনতা আন্দোলন কি ১৯৩০ সালে এলাহাবাদে শুরু হয়েছিল? স্বাধীনতার শপথ আমরা কি শুধু ১৯৪০ সালে লাহোরে গ্রহণ করেছিলাম? ১৯০৬ সালে ঢাকা নগরীতে মুসলিম লীগের জন্ম মুহূর্তেই কি আযাদীর আওয়ায ধ্বনিত হয়ে উঠেছিল উপমহাদেশের প্রতিটি শহর ও পল্লিতে? আমরা যখন হিন্দুস্তানী ও বাঙ্গালী, পাঞ্জাবী ও সিন্ধি, পাঠান ও মোপলাতে বিভক্ত হয়ে সাম্রাজ্য-বাদীদের রাজ্য বিস্তারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করছিলাম, দেশ ও জাতির সে দুর্দিনে ইংরেজদের মতলব কারা ফাঁস করে দিয়েছিল? হিন্দভূমি 'দারুল হারবে' পরিণত হওয়ায় কারা হৃত আযাদী পুনরুদ্ধারের জন্য জানমাল কোরবান করেছিল? দীন-ই-ইলাহীর মায়াজালে আমরা যখন আবদ্ধ হয়ে পড়ছিলাম, 'মাজমাউল বাহরানে'র ক্লিন্ন জলে আমরা যখন অবগাহন করছিলাম, পাঁচ পীর-সত্যপীর-কালু গাঙ্গীর পুজারী হয়ে আমরা যখন অভিন্ন ভারতীয় লোক-ধর্মের জয়গান করছিলাম, আমাদের একদল যখন 'ভারতের মহামানবের সাগর তীরে' 'এক দেহে' 'লীন হবার সাধনায় রত ছিলেন, তাসাউউফ ও সুফীবাদের নামে দেশ যখন ন্যাড়া ফকিরে ছেয়ে গিয়েছিল অথবা পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সভ্যতার নামে প্রাচ্যের সব কিছু বর্জন করা যখন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তখন স্বতন্ত্র মুসলিম জাতীয়তা বোধের পবিত্র আমানতকে কারা সযত্নে রক্ষা করেছিল? পাকিস্তানের ঐতিহাসিকদের এ সকল প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে হ'বে।
বন্ধুগণ, বিভিন্ন দল ও উপদলগুলির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ব্যক্তি বিশেষকে কেন্দ্র করেই এগুলির উৎপত্তি ও বিস্তৃতি ঘটেছে। "রাজনৈতিক ও মযহাবী ফিকাবন্দীর ইতিহাসে ব্যক্তিবিশেষের প্রাধান্য এরূপ গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে রয়েছে যে, ফির্কা বা পার্টির অন্তর্ভুক্ত কোন ব্যক্তি আদর্শের প্রতি নিষ্ঠা ও কর্মসূচীর অনুসরণের দিক দিয়ে যতই অগ্রগণ্য হোক না কেন, ফির্কার ইমাম বা পার্টির নেতার পুরাপুরি ভক্ত ও অনুগত না হওয়া পর্যন্ত তার শিক্ষা ও কর্মতৎপরতার কোন মূল্যই স্বীকৃত হয় না। আদর্শনিষ্ঠা ও কর্মতৎপরতা অপেক্ষা ফির্কাবন্দীর ইতিহাসে দলীয় নেতার প্রতি ব্যক্তিগত আনুগত্য এবং তার অন্ধ অনুসরণ বা 'তাকলীদ'কে অধিক মূল্য দেয়া হয়ে থাকে। ফির্কাপরস্তের দল কালক্রমে দলপতির ভ্রম ও প্রমাদগুলি একান্তশ্রদ্ধা ও নিষ্ঠার সাথে অনুসরণ করে চলতে থাকে এবং দলীয় আদর্শ ও কর্মসূচীর নামে দলপতির ব্যক্তিগত উক্তি ও আচরণের বিরোধ ঘটলে অন্ধ ভক্তের দল নেতার উক্তি ও আচরণ-কেই প্রাধান্য দান করে। ফলে আদর্শ নিষ্ঠা ও কর্মতৎপরতার পরিবর্তে গোঁড়ামী ও অহমিকা ফির্কার সকল কার্য্যকলাপের উপর প্রভাব বিস্তার করে বসে।
পক্ষান্তরে 'তাহরীকে আহলে হাদীস' একটি আদর্শ ভিত্তিক আন্দোলন। আহলে হাদীসদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম শাহ্ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী স্বীয় অমর গ্রন্থ হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগায় বলছেন:
فَإِذا لم يَجدوا فِي كتاب الله أخذُوا سنة رَسُول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَوَاء كَانَ مستفيضا دائرا بَين الْفُقَهَاء، أَو يكون مُخْتَصًّا بِأَهْل بلد أَو أهل بَيت أَو بطرِيق خَاصَّة، وَسَوَاء عمل بِهِ الصَّحَابَة وَالْفُقَهَاء، أَو لم يعملوا بِهِ،
অর্থাৎ "কোন সমস্যার সমাধান আল্লাহ পাকের পবিত্র গ্রন্থ আল্-কোরআনে পাওয়া না গেলে আহলে হাদীসরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ও সাল্লামের হাদীস থেকে তা গ্রহণ করে থাকেন-সে হাদীস মুসলিম ব্যবহাব শাস্ত্রবিদদের মধ্যে প্রচারিত থাকুক অথবা কোন নির্দিষ্ট নগর-বা পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুক; (সে হাদীস বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হোক) বা মাত্র একটি সনদে বিবৃত হোক; সে হাদীসের উপরে সাহাবা ও ফকীহগণ আমল করে থাকুন আর না থাকুন।" শাহ সাহেব আরও বলেছেনঃ
وَمَتى كَانَ فِي الْمَسْأَلَة حَدِيث فَلَا يتبع فِيهِ خلاف أثر من الْآثَار، وَلَا اجْتِهَاد أحد من الْمُجْتَهدين،
অর্থাৎ, 'কোন সমস্যার সমাধান রসূলুল্লাহর -(সঃ) হাদীসে পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কোন সাহাব', তাবেয়ী, ইমাম ও মুজতাহিদের সিদ্ধান্তের অনুসরণ আহলে হাদীসগণ করবেন না"।
আহলে হাদীস আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য ব'লে উল্লিখিত হলেও হাদীসের এই সার্বভৌমত্ব মুসলমানদের কোন দল আদর্শগত ভাবে অস্বীকার করতে পারেননি। আহলে হাদীসদের ন্যায় সুন্নাহ পন্থী অন্যান্য স্কুলগুলিও কোরআনের পর হাদীসকে দলীল হিসাবে সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করেছেন। সেজন্য সমষ্টিগতভাবে তাঁরা 'আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত' নামে পরিচিত। কিন্তু হাদীসের প্রামাণিকতা স্বীকার করা আর তাকে পরিপূর্ণভাবে গ্রহন করে যথাযথ অনুসরণ করা এক কথা নয়। মুহাদ্দিস দেহলভীর উক্তি বিশ্লেষণ করলে আমাদের এ উপসংহারে অবশ্যই উপনীত হতে হবে যে, হাদীস গ্রহন ও অনুসরণ করার যে নীতি আহলে হাদীসগণ অবলম্বন করেছেন অন্যান্য দলের জন্য তা অনুসরণীয় নয়। দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যেতে পারে যে, শাফেয়ীগণ শুধুমাত্র সে হাদীসগুলিরই অনুসরণ করেন যেগুলি তাঁদের ইমাম বা স্কুল কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) কর্তৃক গৃহীত বা তাঁর মযহাব কর্তৃক অনুসৃত এমনকি কোন বিশুদ্ধ হাদীসকেও গ্রহণ করতে তারা রাযী নন। তাঁদের ক্ষেত্রে তাই হাদীসের অনুসরণ ইমামের অনুসরণের নামান্তর মাত্র। কোরআন ও হাদীসের প্রত্যক্ষ ও অকুণ্ঠ অনুসরণের পরিবর্তে তাঁরা স্বীয় নেতার অভিমত বা সিদ্ধান্ত মাত্র অনুসরণ করেন এবং মাযহাবের প্রতিকূল কোন হাদীস তাহকীক ক্ষেত্রে অধিকতর গ্রহনযোগ্য বলে প্রমাণিত হ'লেও তার পরোক্ষ ব্যাখ্যায় প্রবৃত্ত হন। ফলে কোরআন ও হাদীসের সর্বভৌমত্ব আজ বিলুপ্ত হ'তে বসেছে। রসূলুল্লাহ (দঃ) এর নির্দেশ প্রতিপালন আজ ইমাম, মুজতাহিদ, অলি, দরবেশ ও পীর সাহেবানের অনুমতি ও অনু-মোদনসাপেক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ তাই আমাদের স্মারণ করা উচিত দ্বিতীয় শতকের স্বনামধন্য ফকীহ ইমাম সুফয়ান সাওয়ীর বাণী:
لا يقبل قول الا بعمل ولا يستقيم قول وعمل الا بنية ولا يستقيم قول وعمل ونية الا بموافقة السنة .
অর্থাৎ "আমল ছাড়া মুখের কথা গ্রহণযোগ্য নয়; আবার নীয়তের বিশুদ্ধতা ছাড়া কথা ও কাজ সার্থক হয়না এবং রসূলুল্লাহ (দঃ) এর আদর্শের অনুরূপ না হওয়া পর্যন্ত কোন কথা, কাজ বা নীয়ত বিশুদ্ধ হ'তে পারে না।"
যাঁরা মনে করেন যে, আহলে হাদীসরা একটি নতুন মতবাদ প্রচার করছে বা তাদের কার্যতৎপরতা শুধুমাত্র হিন্দ-পাকিস্তানে সীমাবদ্ধ রয়েছে তাঁদের আমি উস্তায আবু মনসুর আবদুল কাহের বাগদাদীর 'উসূলুদ দীন' গ্রন্থ পড়ে দেখতে অনুরোধ করি। উসতায বাগদাদীর মতে আরব, শাম, ইরাক, ইরান, মিসর, য়ামন ও আফ্রিকা-এশিয়া সীমান্তবর্তী এলাকার অধিবাসীবৃন্দ সকলেই হিজরী দ্বিতীয় শতক পর্যন্ত আহলে হাদীস মতালম্বী ছিলেন। স্বনামখ্যাত ভৌগলিক আল মাকদেসী তাঁর 'আহসানুত তাকাসীম' গ্রন্থে মুসলিম বিজীত হিন্দু এলাকার বিবরণ লিপিবদ্ধ করতে গিয়ে বলেছেন: "এবং মুসলমানগণ অধিকাংশই আহলে হাদীস।" ইসলামের প্রথম যুগে সকলেই নিজকে মুসলিম নামে আখ্যাত করতেন। শিয়া-খারেজী, জাহমী-মুতাযিলী, রাফেযী-নাসেবী, মুরজিই-মুআত্তিলা প্রভৃতি ফিৎনার উদ্ভব হ'লে পরই মাত্র আল-কোরআন ও আল-হাদীসের অকুণ্ঠ অনুসরণে অবিচল মুসলিমবৃন্দ আহলে হাদীসরূপে নিজদের পরিচিত করতেন এবং অন্যান্যরা সেভাবে তাঁদের গ্রহণ করতেন। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন:
ومن أهل السنة والجماعة مذهب قديم معروف قبل أن يخلق الله أبا حنيفة ومالك والشافعي وأحمد فإنه مذهب الصحابة الذين تلقوه من نبيهم ومن خالف ذلك كان مبتدعا عند أهل السنة والجماعة .
অর্থাৎ “আল্লাহ তাআলা আবু হানীফা, মালেক, শাফেয়ী ও আহমদ-মহামতি ইমাম চতুষ্টয়কে সৃষ্টি করারও পূর্বে আহলে সুন্নাতের একটি সনাতন ও সুপরিচিত মযহাব ছিল। এটা সাহাবাদের মাযহাব যা তাঁরা তাঁদের নবী (দঃ) এর নিকট থেকে শিক্ষা করেছিলেন। যে ব্যক্তি এই মাযহাবের বিরোধিতা করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতে তারা বিদআতী বলে প্রতিপন্ন হবে।"
হিদায়ার টীকা এনায়ার বিবরণ মতে হাযরাত ইমাম আবু হানীফার যামানাতেও আহলে হাদীসরা সমভাবে বিদ্যমান ছিলেন। হযরত ইমাম সাহেব যখন বাগদাদে প্রবেশ করেন তখন সরস খেজুরের বিনিময় সুসিদ্ধ কিনা সে নিয়ে আহলে হাদীসদের সাথে তাঁর বিতর্ক হয়।
আল্লামা সাইয়েদ মুহাম্মদ আমীন বিন আবেদীন শাফী হানাফী ফিকহের গ্রন্থ রদ্দুল মুহতার (৩১৩পৃ) المحتار رد এ তাতারখানিয়া ও ফাতাওয়ায়ে ছাম্মাদীয়ার বরাত দিয়ে উল্লেখ করেছেন:
حكي أن رجلا من أصحاب أبي حنيفة خطب إلى رجل من أصحاب الحديث ابنته في عهد أبي بكر الجوزجاني فأبى إلا أن يترك مذهبه فيقرأ خلف الإمام، ويرفع يديه عند الانحناء ونحو ذلك فأجابه فزوجه،
অর্থাৎ কথিত আছে, ইমাম আবু বকর জুযজানীর আমলে জনৈক হানাফী কোন আহলে হাদীসের নিকট তার কন্যার পাণি প্রার্থনা করে। আহলে হাদীস লোকটি জানায় যে, হানাফী তার মাযহাব ত্যাগ করে ইমামের পিছনে সূরা ফাতেহা পাঠ এবং রুকুতে যাওয়া এবং রুকু থেকে উঠার সময় হাত না উঠান অর্থাৎ রাফ-ই-ইদায়ন ইত্যাদী আহলে হাদীস মাযহাবের কাজ না করা পর্যন্ত সে তাকে কন্যা দান করবে না। হানাফী ব্যক্তি কন্যার পিতার শর্ত গ্রহণ করাতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।" এগুলো উদ্ধৃতি থেকে এ কথা অবিসংবাদিতরূপে প্রমাণিত হয় যে, ইসলামের ইতিহাসের সকল যুগে সর্বদেশে আহলে হাদীসরা স্বীয় মতে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন। (তাকলীদ সম্পর্কে এই আলোচনা মূলতঃ আল্লামা আবদুল্লাহেল কাফী আল কোরায়শী (রহঃ) কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন অভিভাষণ-যেগুলি 'আহলে হাদীস পরিচিতি' নামক পুস্তকে সংকলিত হয়েছে-এর উপর ভিত্তি করে বিরচিত।)
বন্ধুগণ, নিজেদেরকে আহলে হাদীসরূপে পরিচয় দান করলেই কি আমরা বেহেশতের সার্টিফিকেট লাভ করব? না ঈমান ও আমলে, আখলাক ও মুআমালাতে সম্পূর্ণরূপে ইসলামী জীবন যাপন করলে-মাত্র আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অনুগ্রহ লাভের আশা করতে পারি? আমার মুখে আহলে হাদীস হ'ব' না, কথায় ও কাজে আল কোরআন ও আস্-সুন্নাহর অনুসারী হ'ব? আমাদের গঠনতন্ত্রের দ্বিতীয় ধারার ব্যাখ্যাতে বলা হয়েছে যে, আমাদের আন্দোলনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হোল: ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, তমদ্দুনী, রাষ্ট্রিক, ব্যবহারিক ও আধ্যাত্ম-জীবনের যে পূর্ণাংগ ও সর্বশেষ বিধান আল্লাহ তদীয় শেষ নরী ও রসূলগণের সম্রাট, নিখিল ধরণীর রহমত হযরত মোহাম্মদ মুছতফার (দঃ) মাধ্যমে বিশ্ববাসীর নিকট প্রেরণ করিয়াছেন, স্বয়ং তাহা অনুসরণ করিয়া চলা এবং জীবনের প্রতি স্তরে উক্ত বিধানকে বাস্তবায়িত করার জন্য আগ্রহশীল ও কর্মতৎপর হওয়া।"
আজ আমাদের নিজেদের জিজ্ঞাসা করে -দেখার সময় এসেছে যে, আমরা ক'জন আমাদের এ উদ্দেশ্য সফল ও সার্থক করে তোলার জন্য সজ্ঞানে ও সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করি। আমাদের মধ্যে যারা নিজেদেরকে আহলে হাদীসরূপে পরিচয় দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন বা আজকের কনফারেন্সের মত কনফারেন্স অনুষ্ঠানের মধ্যে ব্যক্তিগত লাভ ক্ষতির আঁচ করেন তাঁদের কথা অবশ্য স্বতন্ত্র। তাঁরা নিজেদের বিস্মৃত হয়েছেন এবং প্রভুর পথ থেকেও বিচ্যুত হ'তে চলেছেনঃ
وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ نَسُواْ ٱللَّهَ فَأَنسَىٰهُمۡ أَنفُسَهُمۡۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ سُورَةُ الحَشرِ: ١٩
অর্থাৎ "যে সকল জাতি আল্লাহকে বিস্মৃত হয়েছে, হে মুসলিমবৃন্দ, তোমরা তাদের মত হয়োনা। আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার অনিবার্য্য পরিণতি স্বরূপ তারা, নিজেদেরও বিস্মৃত হয়েছে; বস্তুতঃ তারা অনাচারী।"
বন্ধুগণ, আযাদী হাসেলের প্রাক্কালে জাতির জনক কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেছিলেন:
"We maintain and hold that Muslims and Hindus are two major nations by any definition or test of a nation. We are a nation of a hundred million, and, what is more, we are a nation with our own distinctive culture and civilization, language and literature, art and architecture, names and nomenclature, sense of value and proportion, legal laws and moral codes, customs and calendar, history and traditions, aptitudes and ambitions, in short, we have our own distinctive outlook on life and of life."
অর্থাৎ "আমরা এই দৃঢ় মত পোষণ করি যে, জাতীয়তার যে কোন-সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা অনুসারে মুসলিম ও হিন্দু দু'টি পৃথক জাতি। দশ কোটি অধিবাসীর সমবায়ে আমরা একটি জাতি এবং তার চেয়েও বড় কথা এ জাতির একটি সুষ্পষ্ট ও নিজস্ব দৃষ্টি ও তমদ্দুন, ভাষা ও সাহিত্য, কলা ও স্থাপত্য, নাম ও সংজ্ঞা, মূল্য ও পরিমাণ বোধ,
আইন-কানুন ও নীতিবোধ, রীতিনীতি ও পঞ্জিকা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, কর্ম-কুশলতা ও উচ্চাভিলাস বিদ্যমান রয়েছে। সংক্ষেপে জীবন ও জীবনের আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে আমাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে।" (Z. A. Suleri প্রণীত My Leader গ্রন্থ দ্রষ্টব্য)
পাকিস্তান হাসিলের পর ঈদুল ফিতরের বিরাট জামাআ'তকে লক্ষ্য করে কায়েদে আযম আরও বলেছিলেন:
مسلمانو همارا پروگرام قرآن پاک میں موجود ھے ھم مسلمانون کو لازم ھے کہ قرآن پاک کو غور سے پڑھین اور قرآنی پروگرام کے ھوتے ھوئے مسلم لیگ مسلمانوں کے سامنے کوئی دوسرا پروگرام پیش نہیں کر سکتی ۔
অর্থাৎ "মুসলমানগণ, আমাদের প্রোগ্রাম কোরআন পাকে মওজুদ আছে। অভিনিবেশ সহকারে কোরআন পাক অধ্যয়ন করা আমাদের সকল মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। কোরআনী প্রোগ্রামের বিদ্যমানতায় মুসলিম লীগ মুসলমানদের সম্মুখে দিতীয় কোন কার্য্যসূচী পেশ করতে পারেনা।"
আফসোস, আযাদী হাসিলের মাত্র আঠার বছরের মধ্যে কায়েদে 'আযম বর্ণিত আমাদের স্বাতন্ত্র্যবোধ আমরা হারাতে বসেছি হয়ত বা হারিয়ে ফেলেছি। শহরে পল্লীতে আজ আমাদের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও অনুষ্ঠানের ছড়া-ছড়ি। কিন্তু যে সংস্কৃতির 'কালচার' এ সমস্ত অনুষ্ঠানাদিতে হয়ে থাকে তা কতটা পাকিস্তানী এবং কতটা ইসলাম-সম্মত সে সম্বন্ধে স্বভাবতঃ অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে। আমাদের কথা সাহিত্যিক ও কবিরা আমাদের সভ্যতা ও ইতিহাস থেকে তাঁদের উপাদান ও ins-piration কতটা সংগ্রহ করে থাকেন এবং তাঁদের রচনা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কতটা সার্থক আলেখ্য বিদগ্ধ পণ্ডিত মাত্রই তা অবগত রয়েছেন। আমাদের আইন কানুন, রীতিনীতি ও আচার অনুষ্ঠানে আমাদের মুসলিম জাতীয়তার আদর্শকে আমরা কতটা রূপায়িত করেছি তা আপনারাই বিবেচনা করে দেখুন। পাকিস্তান হাসিলের পূর্বে তবু কিছু সংখ্যক মুসলিম কোরআন অনুধাবন করতে না পারলেও অন্ততঃ
শুদ্ধভাবে পড়তে পারত। আজকের শিক্ষানীতির বাহাদুরিতে কোরআন পাঠকের সংখ্যা দ্রুতগতিতে হ্রাস পাচ্ছে। শিগগিরই হয়ত এমন অবস্থা দেখা দেবে যখন দেখে দেখে জুমআর খুতবা পড়ার মত মুনশী সাহেবদের অভাব আমাদের মাঝে দেখা দেবে। কায়েদে আজম তো কোরআন 'গওর' করে পড়ার উপদেশ দিয়েছিলেন কিন্তু স্কুল কলেজগুলো থেকে আরবী নির্বাসিত ও মাদরাসাগুলোকে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক পরিকল্পনা থেকে সযত্নে বহিভূত করার কল্যাণে আমরা 'আ' 'বা' পড়তেই শিখলামনা, কোরআন পড়ব কখন? আর আমাদের প্রোগ্রাম চোদ্দ শ' বছরের পুরনো এক কিতাব থেকে গ্রহণ করলে আমরা প্রতিক্রিয়া--শীলরূপে নিজেদের প্রতিপন্ন করব না?
রসূলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন,
من أشبع وجاره جائع فليس منا
"যে পেট ভরে পানাহার করল অথচ তার প্রতিবেশী অনশনে রাত্রি অতিবাহিত করল সে আমার উম্মতের অন্তভুক্ত নয়।”
আল্লাহ পাকের নির্দেশ:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَأۡكُلُوٓاْ أَمۡوَٰلَكُم بَيۡنَكُم بِٱلۡبَٰطِلِ سُورَةُ النِّسَاءِ: ٢٩
অর্থাৎ "হে বিশ্বাসপরায়ণ সমাজ, তোমরা তোমাদের ধন সম্পদ অবৈধ উপায়ে উপভোগ করোনা।"
আরও ইরশাদ হয়েছে:
فَأَوۡفُواْ ٱلۡكَيۡلَ وَٱلۡمِيزَانَ وَلَا تَبۡخَسُواْ ٱلنَّاسَ أَشۡيَآءَهُمۡ وَلَا تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ بَعۡدَ إِصۡلَٰحِهَاۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡر لَّكُمۡ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ الأَعۡرَافِ: ٨٥
"অতএব তোমরা মাপ ও ওজন পূর্ণ করবে এবং জনগণকে তাদের প্রাপ্য থেকে প্রতারিত করবে না এবং পরিশুদ্ধির পর তোমরা দুনয়াতে ফাসাদ ছড়াবে না। তোমাদের জন্য এটাই কল্যাণকর যদি তোমরা মোমেন হয়ে থাক।"
কিন্তু আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য, ক্রয় বিক্রয়, কৃষি ও শিল্প ইসলামী ন্যায় পরায়ণতার ভিত্তির 'পরে কি স্থাপিত হয়েছে? সমাজের বৃহত্তম অংশের বৃহত্তম কল্যাণের জন্যই কি আমাদের সকল প্রচেষ্টা নিয়োজিত? কালোবাজারী, মুনাফা-খোরী, উৎকোচ শিকার ও পারমিট কেনা বেচার ঘৃণ্য অভ্যাস কি আমরা পরিত্যাগ করতে পেরেছি। আমাদের পাটকল শ্রমিক ও পাটকল মালিকরা পাট ব্যবসা থেকে কি সমভাবে লাভবান হচ্ছেন? আমরা মনোপলী ও কাটেল প্রথার একনিষ্ঠ অনুসারী হয়ে মাআরিবের লবণখনী সম্পর্কে পরিগৃহ'ত নীতির প্রতি কি সম্মান প্রদর্শন করছি? আমাদের মরহুম নেতার কথায় তাই জিজ্ঞাসা করি:
"তুমি নিজকে ইসলামের মস্ত বড় champion বলে জোর গলায় দাবী করছো, তুমি কি আল্লাহর মনোনীত আদর্শ আর রসূলের নীতিকে মনে প্রাণে মেনে নিয়েছ? রসূলুল্লাহকে (দঃ) কি দ্বীনের একমাত্র ইমামরূপে মেনে নিয়েছ? প্রমাণ কোথায়? এই অসত্য বড়াই ও মিথ্যা ভান গোটা জাতটাকে রসাতলে দিল!"
প্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে আজও যারা মুক্ত নয়, পেট পূর্তির জন্যই যাদের সর্বশক্তি নিঃশেষিত, আত্মকলহ ও ভ্রাতৃবিরোধে যাদের সময় অতিবাহিত, ত্যাগ ও তিতিক্ষা, সংযম ও সহনশীলতার পাঠ নিতে আজও যাদের বাকী অন্যদের আত্ম অনুশীলন ও সংগ্রামের সবক দেয়ার স্পর্ধা তাঁরা কোথায় লাভ করলেন। পরকে সবক দেয়ার পূর্বে নিজেরা সবক গ্রহণ করলে তাঁরা সাধারণ বুদ্ধির পরিচয় দেবেন।
বন্ধুগণ, জামাআতী ঐক্য ও সংহতির পাশে আপনারা আজ যে বলিষ্ঠ পদবিক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তা সত্যই প্রশংসনীয়। আপনাদের উদ্যম সফল হোক! আপনাদের প্রচেষ্টা সার্থক হোক। শুধু মাত্র জেলা জমঈয়ত গঠন করলেই আমাদের সকল সমস্যার সমাধান হবেনা। আজ সবচেয়ে প্রয়োজন হয়েছে জামাআতী ভাই সাহেবানদের তাঁদের কর্তব্য সম্বন্ধে সজাগ করে তোলা। এ বড় কঠিন কাজ। বিংশ শতকের অশান্ত পরিবেশে অনেকেই আজ সংশয়বাদী হয়ে পড়েছেন। আখেরাতের চেয়ে দুনয়ার চিন্তা এঁদের অনেকের মন ও মস্তিষ্ক আছন্ন করে রেখেছে। এ সংশয় ও স্বার্থ চিন্তা থেকে তাঁদের উদ্ধার করা খুব সহজ নয়। তবু আমাদের নিরাশ হ'লে চলবেনা। আমাদের নবী (দঃ) এর মহান আদর্শ আমাদের উৎসাহিত করবে। আমরা ইনশা আল্লাহ এক দিন সফল হবই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তওফিক দান করুন! আমীন !!
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين والصلوة والسلام على رسوله محمد خاتم النبيين وعلى آله وأصحابه أجمعين .
(তর্জুমানুল হাদীস, দ্বাদশ বর্ষ, ৫ম সংখ্যা থেকে গৃহিত)
