থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন
প্রতিবছর ইংরেজি ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২ টা ১ মিনিটে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বর্তমান বিশ্ব একটি নতুন বর্ষে পদার্পণ করে। এ অনুষ্ঠানগুলো কি ইসলামে সমর্থিত!!? আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকো, যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে (সূরা আলে-ইমরান: ১৩১)। তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ও পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো (সূরা আত-তাহরীম: ৬)। আসুন, নিজের ও পরিবারের কল্যাণের জন্যই থার্টি ফাস্টর্ নাইট উদ্যাপন সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি জেনে নেই।
উৎপত্তি
প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জমশিদ খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ সালে নববর্ষ প্রবর্তন করেন। পরবর্তীতে ব্যাবিলনের সম্রাট জুলিয়াস সিজার খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ সালে ইংরেজি নববর্ষ প্রচলন করেন। প্রথমদিকে নববর্ষ বিভিন্ন তারিখে পালন করা হতো। পরবর্তীতে ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর পহেলা জানুয়ারিতে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়। বাংলাদেশে থার্টি ফার্স্ট নাইটের ব্যাপক প্রচলন ঘটে ২০০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতের মিলেনিয়াম বা সহস্রব্দ পালনের মধ্য দিয়ে। (সূত্র ইন্টারনেট)
থার্টি ফার্স্ট নাইট কি ইসলাম সমর্থিত !
প্রথমত, নববর্ষ বা এ জাতীয় কোনো দিবস উদযাপন ইসলামে প্রমাণিত নয়, সমর্থিতও নয়। উপরন্তু, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে যত অনুষ্ঠান বা পর্ব পালন করা হয় এবং এর নেতিবাচক যে প্রভাব প্রমাণিত সেগুলো পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে, এটি কোনোভাবেই ইসলাম সমর্থিত নয়; বরং হারাম। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
এটি মূলত প্রাচীন ‘চধমধহরংস’ (পৌত্তলিকতা) বা প্রকৃতি পূজারীদের বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা সংস্কৃতি। আর এর সাথে যুক্ত হয়েছে আধুনিক ভোগবাদীদের লালসার নগ্ন ছোঁবল। এই পর্বকে সামনে রেখে ইসলাম বিরোধী মৌলিক যে দিকগুলো সংঘটিত হয় তা হলো—
নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও অশ্লীলতা-বেহায়াপনা: এ রাতকে কেন্দ্র করে চলে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা এবং অশালীন ও বেহায়াপনার মহোৎসব। এ রাতে যুবতীরা আঁটসাট, অশালীন ও অর্ধনগ্ন পোশাক পরিধান করে অবাধে চলাফেরা করে। অথচ এ প্রসঙ্গে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামবাসী দু’প্রকার মানুষ, আমি যাদের (এ পর্যন্ত) দেখিনি। একদল মানুষ, যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তা দ্বারা তারা লোকজনকে মারবে এবং একদল নারী, যারা কাপড় পরিহিত (অথচ) উলঙ্গ, যারা অন্যদের আকর্ষণকারিণী ও নিজেরাও আকৃষ্টা, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। ওরা জান্নাতে যেতে পারবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না অথচ এত এত দূর হতে তার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়। (সহীহ মুসলিম: ২১২৮; ই.ফা.বা.: ৫৩৯৭, ই.সে. ৫৪১৯)
শিরকযুক্ত স্লোগান: মুসলিমদের অনেকেই বর্ষবরণ করতে দিয়ে শিরকের মধ্যে লিপ্ত হয়ে ঈমানহারা হচ্ছে। আর তাদের স্লোগান হচ্ছে-
“মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা
অগ্নিস্নানে সূচি হোক ধরা”
এ স্লোগানে অগ্নিপূজকদের আগুন দ্বারা পবিত্র হওয়ার ভ্রান্ত বিশ্বাস সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। অথচ অগ্নিকে সম্মান করা, আগুনের কাছে সাহায্য চাওয়া এবং আগুন দ্বারা পবিত্র হওয়ার ধারণা করা শিরক। আর আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তার সাথে শিরককারীকে ক্ষমা করবেন না (সূরা নিসা: ১১৬)।
শরীরে উল্কি আঁকা ও ছবি অঙ্কন: বর্ষবরণের এ উৎসব উপলক্ষে তরুণ-তরুণীরা শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন আকৃতির ট্যাটো বা উল্কি এঁকে উল্লাস প্রকাশ করে। অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শরীরে উল্কি অঙ্কনকারী ও উল্কি গ্রহণকারিণী, সুদগ্রহীতা ও সুদদাতার ওপর অভিসম্পাত করেছেন। কুকুরের মূল্য গ্রহণ করতে এবং পতিতাবৃত্তির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে নিষেধ করেছেন। আর ছবি অঙ্কনকারীদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন। [সহীহুল বুখারী-৫৩৪৭]
বিজাতীয় সাদৃশ্য: থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্যাপন সম্পূর্ণরুপে বিজাতীয় সংস্কৃতি। এ রাতে মেসেজের মাধ্যমে অভিবাদন জানানো, আতশবাজি, পটকাবাজি, ফ্যাশন শো, ফায়ার প্লে, ডিজে পার্টি ও কনসার্ট আয়োজনের পাশাপাশি যুবসমাজের মধ্যে নেশা ও মাদক সেবনের প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। বিজাতীয় সংস্কৃতির সাথে সাদৃশ্য রেখে এরকম ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করার ক্ষেত্রে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করলো সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। (আহমাদ, আবু দাউদ, মিশকাত: ৪৩৪৭)
যুব সমাজকে ধ্বংস ও নারীদের সম্ভ্রম নষ্ট করার নীল নকশা
যুবসমাজকে ধ্বংস ও নারীদের সম্ভ্রম নষ্ট করার জন্যই ভোগবাদীদের হাত ধরে থার্টি ফার্স্ট নাইট বাংলাদেশে আমদানি করা হয়েছে। ২০০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা ২৫ মিনিটে গুলশানে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনকারী এক তরুণীকে কিছু মাতাল যুবক শ্লীলতাহানি করে ও তার শরীরের বেশির ভাগ কাপড় ছিঁড়ে ফেলে। (সূত্র-দৈনিক মানবজমিন, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০০০ইং) আর ২০০১ সালে শাওন আখতার বাঁধনের ক্ষত-বিক্ষত দেহ কে না দেখেছেন? এরমক আরো কত বাঁধন যে শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই! এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, থার্টি ফাস্টর্ নাইট একটি যেনা-ব্যভিচারের নোংরা উৎসব, যা সমাজের কোনো উপকার বয়ে আনে না; বরং সমাজকে ধ্বংস করার উষ্কানি দেয় মাত্র। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আর তোমরা যেনা-ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না (সূরা বনী ইসরাইল: ৩২)। মহান আল্লাহ যাবতীয় অশ্লীল, অন্যায় কাজ হারাম করেছেন (সূরা আল আ‘রাফ: ৩২)।
আমাদের আহ্বান
পরিশেষে তরুণ-যুবসমাজের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি- পৌত্তলিকতার মোড়কে ভ্রান্ত আক্বীদাহ লালন এবং সামাজিক ব্যাধি যেনা ও মদ্যপানের সয়লাব ঘটিয়ে যে উৎসব এদেশের মানুষের ধর্মীয়, নৈতিক ও সামাজিক পদস্খলন ঘটায় তা থেকে বিরত থাকুন। বিজাতীয় নিকৃষ্ট সংস্কৃতিকে চিরদিনের জন্য বাংলাদেশ থেকে বিলীন করতে আমরা সচেষ্ট হই। আমরা নিজেরা এসব থেকে বিরত হই, নিজ পরিবার ও সমাজকে বিরত রাখি। এ লক্ষে সকল মুসলিমকে সীসাঢালা প্রাচীরের মতো প্রতিরোধ দুর্গ তৈরী করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা ও অন্যদেরকে এই বিষয়ে সচেতন করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।